বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দাও

করোনায় ছেয়ে গেছে গোটা বিশ্ব। বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। রেহাই পায়নি শিক্ষাব্যবস্থাও। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো।করোনা মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান এবং বৈশ্বিকভাবে ২০তম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, করোনা হয়তো কখনোই চিরবিদায় নেবে না যতক্ষণ না সমস্ত মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে টিকার আওতায় আনতেও সময় লাগবে বেশ।

করোনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের সময় বছর পেরিয়েছে। শিক্ষার্থীদের চোখে হতাশা ছাড়া আর কিছুই নেই। চলছে অনলাইন ক্লাস, যা প্রকৃত ক্লাসের পর্যাপ্ত বিকল্প নয়। বিশেষ করে প্রকৌশল অনুষদের ক্লাসগুলো অনলাইনে সম্পন্ন করা পুরোপুরি অসম্ভব, যেখানে অধিকাংশ চ্যাপ্টারের সঙ্গে ল্যাবের সরাসরি সম্পর্ক থাকে। অনলাইন ক্লাসের কথা বলতে গেলে উচ্চমূল্যের ডেটা কেনার ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য তো আছেই। ডেটা স্পিডের ক্ষেত্রে সিম কোম্পানিগুলোর চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া গেলেও এর আড়ালে ঘটে অন্য কিছু। শহুরে শিক্ষার্থীরা মোটামুটি ডেটা স্পিড পেলেও গ্রামাঞ্চলের ডেটা স্পিড অনলাইন ক্লাস করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। দীর্ঘ সময় বাসায় অবরুদ্ধ থাকতে থাকতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তৈরি হচ্ছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জট। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে শিক্ষার্থীরা এদিক-সেদিক যাবেন এবং করোনাক্রান্ত হবেন বলে ধারণা করা হলেও বাড়ির বিভিন্ন কাজে তাঁরা ঠিকই বাইরে বেরোচ্ছেন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলকারখানা কিংবা পোশাক খাতের কর্মীদের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। এ অবস্থায় দেশে করোনার প্রকোপ তুলনামূলক কমে গেলে এবং লকডাউন শিথিল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে যথাসম্ভব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক।

হাজারো বদ্ধ স্রোত আছড়ে পড়ুক জীবননদীর তীরে। যে বাবা করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে বাইরে চলে যান, তাঁর সন্তান হয়ে আমি কী করে লেজ গুটিয়ে বদ্ধ ঘরে বসে থাকব নামমাত্র অনলাইন ক্লাস করে? আমাকেও যে সংসারের হাল ধরতে হবে।

* লেখক: যোবায়ের ইবনে আলী, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
**[email protected]–এ লেখা পাঠাতে পারেন।