এক দিনের ক্যাম্পাস ট্যুর

গবি শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র বাদামতলা। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পদচারণ কমে গেছে এই আড্ডাকেন্দ্রে। মঙ্গলবারের গেট টুগেদারে বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিমেষেই প্রাণোচ্ছল করে তোলেন বাদামতলাকে
ছবি: লেখক

দ্বিতীয় বর্ষে উঠলেও সহপাঠীদের সঙ্গে মেতে ওঠার ভাগ্য হয়নি মাহবুবা, শাহরিন ও ইউনুসের। টংদোকানে চা খেয়ে সকালবেলার ক্লাস—এখন তা স্মৃতি। ক্লাসের ফাঁকে খোশগল্পেও মাতেন না বন্ধুরা।

এ নিয়ে ইউনুস রিয়াজ বলেন, শিক্ষালয় বন্ধে হাঁপিয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন পড়াশোনায় নবীন–প্রবীণদের মুখ চেনাও কষ্টসাধ্য। দেড় বছরে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) তিনটি সেমিস্টার শেষ হয় অনলাইনেই। নতুন আরেকটি সেমিস্টারের ক্লাস চলছে। অনলাইন জগতেই দুটি নতুন ব্যাচ এসেছে। পুরোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখাসাক্ষাৎ হয় কম। সম্পর্কের ফাঁকফোকরে জমেছে মরচে।

ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন টিকিয়ে রাখতে গবির বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের শিক্ষার্থীরা গেট টুগেদারের আয়োজন করেন। গত ৩১ আগস্ট সকালে বিএমবি বিভাগের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে পাড়ি জমান। মঙ্গলবার দিনজুড়ে বিদ্যাপীঠে মেতে ওঠেন তাঁরা। গল্প, আড্ডা ও হইহুল্লোড়ে কাটান একটি দিন।

গবির ট্রান্সপোর্ট চত্বরে বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: লেখক

কেউ এসেছেন প্যান্ট-পাঞ্জাবিতে, কেউ শাড়িতে, কেউবা পরেছেন বাহারি রঙের পোশাক। অনুজ-অগ্রজেরা একাডেমিক ভবনের সিঁড়িতে খুলে বসেন কথার ঝুলি। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চলে নবাগতদের পরিচয় বিনিময়। প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ নামা বৃষ্টি যেন বাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সুখানুভূতি। বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র রিফাত। তিনি বললেন, ‘শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা কদিন পর নতুন জীবনে পা দেবে। সশরীর আর ক্যাম্পাসজীবনে ফিরবে কি না, জানা নেই। তাই বয়োজ্যেষ্ঠদের আকুলতা ও শখের বিদ্যাপীঠের প্রতি টান খানিকটা বেশি।’

একাডেমিক ভবনের সামনে অনুজ–অগ্রজ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
ছবি: লেখক

সাড়ে পাঁচ শ দিন পর আনন্দে মেতেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরের খানাপিনা শেষে ক্যাম্পাসের করিডরে বসেন। রেস্তোরাঁ থেকে আনা হয় সবার জন্য আহার। মধ্যাহ্নভোজের পর কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম খেয়ে খানিকটা বিশ্রাম করেন। সূর্যের তেজ কমে এলে ক্যাম্পাসে ঝটিকা ভ্রমণ করেন তাঁরা। মিডিয়া চত্বর থেকে মসজিদ প্রাঙ্গণে যান। ক্যাম্পাস বন্ধের এক শরৎ পেরিয়ে আরেক শরতের আগমন ঘটেছে। একাডেমিক ভবনের পেছনে ফুটেছে কাশফুল। কাশবন দেখে পুলকে উৎফুল্ল হয়ে ছোটাছুটিতে মেতে ওঠেন বিএমবি বিভাগের ছাত্রী তাহমিদ, লিজা, বিদূষীসহ অনেকেই।
গবির নতুন আমবাগানের রাস্তা দিয়ে হেঁটে জিমনেসিয়ামের সামনে। পরে ট্রান্সপোর্ট চত্বর হয়ে বাদামতলায় জমে আড্ডার পসরা। বিকেলে আড্ডাবাজি শেষে ক্যাম্পাস ছাড়েন তাঁরা। দিনজুড়েই চলে গবিয়ানদের ফটোসেশন। শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করার প্রতীক্ষার ইতি ঘটে তাঁদের এক দিনের ক্যাম্পাস ট্যুরে। আল আমিন, শান্ত, রিয়াজ ও মহুয়া গবির বিএমবি বিভাগে পড়েন। ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকায় গেট টুগেদারে যোগ দিতে পারেননি। তাঁরা বলেন, ‘সবাইকে ভীষণ মিস করছি। দুঃখ নেই, সবে তো শুরু। আবার হবে, বড় পরিসরে। একদিন ইনশা আল্লাহ আমরাও থাকব।’

*লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়