এক দিনের ক্যাম্পাস

ছবি: গবিসাসের সৌজন্য

সাবেক শব্দ কী গৌরবের, নাকি পীড়িতের! কয়েকটি বছর আগেও তাজবিদুল ইসলাম, মুন্নি আক্তার ও মো. রিফাত মেহেদী ক্যাম্পাসে রোজ আসতেন একজন শিক্ষার্থী হয়ে। তাঁরা আজও এসেছেন, শুধু বদলে গেছে তাঁদের আগের পরিচয়।

এখনকার ক্যাম্পাসগুলোতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ভিন্নতা দেখা যায়নি সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। তাতে কী! সময় তো কারও জন্য থেমে রয় না। যখন লিখছি, সাল ২০ প্রায় শেষ। এরই মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) সপ্তম কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। সেদিন ছিল সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, গবিসাসের নবাবিষ্কৃত পরিষদ ঘোষণা করা হবে।
সকাল ১০টার মধ্যে বর্তমান দায়িত্বশীলেরা ক্যাম্পাসে এসে পড়ছেন। ধীরে ধীরে আসতে শুরু করলেন সাবেকেরা। মুহূর্তে ক্যাম্পাস রঙিন হয়ে উঠেছে। গবিসাস অষ্টম কার্যনির্বাহী পরিষদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিন। তাই সবার মধ্যে কিছুটা আনন্দ, উদ্দীপনা ও উল্লাস লক্ষ করা গেল।

বেলা ১১টায় উপাচার্যের সভাকক্ষের দিকে এগোতে থাকেন সাবেক ও বর্তমান ক্যাম্পাস সাংবাদিকেরা। গেল মার্চ মাস থেকে ক্যাম্পাস বন্ধে প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলেও দেখা হয়নি অনেকের। দীর্ঘদিন পরে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাই কুশল বিনিময় ও ফটোসেশন চলল খানিকটা সময়। পরে গবিসাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) ডা. লায়লা পারভীন বানু সভাকক্ষে এলেন। তিনি নবাবিষ্কৃত কমিটি ঘোষণা করবেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী, জ্যেষ্ঠ সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল, জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা, বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের প্রধানরা সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে যুক্ত হলেন।

সভায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী বলেন, ‘গবিসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষাক এবং ক্যাম্পাসের মান উন্নয়নে তাঁরাও আমাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারেন। গবির সাংবাদিকেরা বিভিন্ন বিষয়ে ফিচার লিখছেন এবং তাঁরা প্রতিবছর ফিচার প্রদর্শনীও করে আসছেন। এখান থেকেই তাঁদের কাজের স্বীকৃতি শুরু হয়।’

উপাচার্য ডা. লায়লা পারভীন বানু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম-বদনাম দুটিই তোমাদের পরিচয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যে আইন, সেই আইন মেনেই আমাদের কাজ করতে হয়। যার ফলে কোনো বিষয় সমাধান হতে সময়ের প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

পরে উপাচার্য নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করেন। ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদে রোকনুজ্জামান মনি সভাপতি ও অনিক আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন সহসভাপতি মো. রকিবুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ, অর্থ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ধীরা ঢালী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সজল সিংহ, দাপ্তরিক চিত্রগ্রাহক এস এম নাহিদুজ্জাহান। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন সুপর্ণা রহমান, বরাতুজ্জামান ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এই পরিষদে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোহাম্মদ রনি খাঁ।

এরপর ঘণ্টাব্যাপী চলে ফটোসেশন ও জলখাবারের পর্ব। প্রশাসনিক ভবন থেকে বিদায় নিয়ে গবিসাস কার্যালয়ে এসে বসি। মুহূর্তেই মিডিয়া চত্বর সাবেক ও বর্তমানদের অবর্ণনীয় আড্ডা, ভাব-ভালোবাসায় মুখর হয়ে ওঠে।

৩২ একরের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী আছেন হাতে গোনা। দীর্ঘদিন পরে একসঙ্গে ক্যাম্পাস ভ্রমণে বের হই আমরা। থেমে থেমে চলছে গল্প, আড্ডা, স্মৃতিচারণা ও দলীয় ফটোসেশন। বেলা ৩টায় ক্যাম্পাসের সন্নিকটে কাশ্মীরি হোটেলে খেতে গেলাম। মধ্যাহ্নভোজন শেষে ঘোড়া পীর মাজারে শুরু হয় চায়ের পর্ব। খানিকটা সময় জিরিয়ে ক্যাম্পাসের বুকে ফিরে আসি। সন্ধ্যা পর্যন্ত গণবিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে চত্বরে আড্ডা দিয়ে এক দিনের ক্যাম্পাস ইতি হয় মোদের।

*লেখক: শিক্ষার্থী, গণবিশ্ববিদ্যালয়