আমাদের দেশটা কার?

দুর্নীতি
প্রতীকী ছবি

৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। যার মাটির ঘ্রাণে এখনো তাঁদের ভালোবাসার দান কথা বলে। মায়ের ভাষা বাংলায় মাথা উঁচিয়ে কথা বলছি। এত অনেক কষ্টের অর্জন, যা দেখে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আজ বিস্মিত!
এখন তবে কী হচ্ছে এসব? বিবেকের কাছে নতশিরে শিউরে উঠছে মানবতা! মুক্তিযুদ্ধের ঘ্রাণ কি এখনো নাসিকারন্ধ্রে কুলুপ এঁটে বসে আছে? অদ্ভুত চারদিক সবুজ–শ্যামল সুনসান নীরবতা পরিলক্ষিত পবিত্র ভূমি এই বাংলাদেশ। দেশপ্রেম কি চুরি, ঘুষ ও তদবিরের মধ্য দিয়ে আমরা শিখছি?

একটি সন্তানকে মা–বাবা খুবই কষ্ট করে মানুষ করার চেষ্টা করেন। ন্যায়নীতি বোধে ঢুকিয়ে দিলেও বড় হতে হতে যেন লোভের বাটখারা তাদের পেয়ে বসে। এত লেখাপড়া, নৈতিক শিক্ষা তবে কি পদ–পদবি পেতেই আমরা করি? প্রকৃত মানুষ, স্রষ্টার কাজের জন্য তবে কি আমরা উপযুক্ততা হারাচ্ছি? মা–বাবার স্বপ্ন থাকে, তাঁর সন্তান একজন বিসিএস ক্যাডার হোক। দেশের জ্ঞানী, হিতকর আমলা হোক। কিন্তু ক্ষমতা এমন জিনিস, ধরাকে সরা জ্ঞান করতে তখন উচ্চপর্যায়ের বিদ্যা একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বাস্তবে অহরহ বিচার-বিবেচনাহীন সেই পরিস্থিতি, পরিণতি দেখে আমাদের মতো উঠতি সন্তানেরা মা–বাবাদের শঙ্কায় ফেলে দেয়। তাহলে কি কোনো মা–বাবা চাইবে তাঁর সন্তান বড় পদধারী চাকুরে হোক, যে কিনা জাগতিক অর্থ–যশের লোভ সামলাতে পারে না? পরকাল বলতে একটি কথা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। প্রতিটি ধর্মেই পবিত্রতার কথা বলে। অথচ ধর্মে দীক্ষিত হয়েও আমরা প্রতিনিয়ত অধর্মের কাজ করেই চলেছি।

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

সবিনয়ে জানতে চাই, এই দেশ তবে কার? আমলাদের নাকি জনগণের? বেতন আসে কোথা থেকে? জনগণের রোজগারের টাকায় আমরা পেটে ভাত দিই, যা আমাদের কখনোই মনে থাকে না। তবে কি রাষ্ট্রীয় সম্পদ, কার্যাবলি সম্পর্কে জনগণ জানার অধিকার রাখে না? কীসের সিক্রেট তমসা? মনে রাখতে হবে, ক্ষমতার দাফন হয়ে একদিন কবর ধরতে হবে। চিতায় জ্বলবে পরাশক্তির শতরূপ। তখন কোথায় থাকবে এত অহমিকা? পাপ করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকেই একদিন। তখন আর পালাবার পথ থাকে না। রাষ্ট্র একটি ওপেন ডোর সবার জন্যই। সমান জানার, পরামর্শ দেওয়ার, ভুল ধরিয়ে দেওয়ার অধিকার একটি দেশের জনগণের অধিকার। গলা টিপে ধরে সত্যকে মিথ্যা বানানো যায় না। একটি সরকার কয় দিক সামাল দিতে পারে যদি বিচ্ছুর দল লুটপাটে দেশ কানা করে? কোথায় যাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণকারীরা? আমরাই তো তাঁদের মসনদে বসিয়েছি আমাদের দেখাশোনা করার জন্য। ভুল ধরিয়ে দিলেই দোষ!

লেখাপড়া করে বড় বড় ডিগ্রি হাঁকিয়ে পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে চেয়ারগুলোতে বসতে লজ্জা করে না? কবরের কাফনের তো পকেট নেই যে টাকা, বাড়ি–গাড়ি, ক্ষমতা–প্রতিপত্তি ভরে নিয়ে যাওয়ার। সিস্টেম আছে কি কোনো? এসব রঙের দুনিয়ায় চলে, বৃহত্তর জীবন তো পড়েই রইল। সময় থাকতে উত্তম পথ ধরুন সবাই। তা না হলে কারও রেহাই নেই।
*লেখক: পারভীন আকতার, শিক্ষক, চট্টগ্রাম

নাগরিক সংবাদে লেখা পাঠাতে পারেন [email protected] এ।