সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে সিলেটের বাইশটিলা

ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দভ্রমণ কিংবা উচ্ছল সময় কাটাতে পছন্দের নাম বাইশটিলাছবি: লেখক

চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা ও টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝেমধ্যে টিলাবেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে ছুটে গেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। কোনো যান্ত্রিক দূষণ নেই। কোথাও আবার ছুটে চলছে রুপালি ঝরনাধারা। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে। এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার পাশের বাইশটিলা।

সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় বাইশটিলা দেখতে পর্যটকেরা অনেকেই ছুটে যান
ছবি: লেখক

সিলেটের বাইশটিলার খ্যাতি অনেক। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্য এক ভালো লাগার ধারক হয়ে আছে সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার পাশে অবস্থিত বাইশটিলা পর্যটন। ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দভ্রমণ কিংবা উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান বাইশটিলা। সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় বাইশটিলা দেখতে পর্যটকেরা ছুটে যান। তারপর ঘুরে দেখেন বাইশটিলার এপাশ–ওপাশ। দেখে আসতে পারেন নৌকার সমারোহ।

যা দেখবেন

সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত বাইশটিলা। বাইশটিলাতে প্রবেশের আগে হাতের বাঁ দিকে দেখবেন লাক্কাতুরা স্টেডিয়াম। বাইশটিলায় প্রবেশপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বা রিকশায় যেতে যেতে ডানে-বাঁয়ে দেখতে থাকুন সবুজ আর সবুজের সমারোহ। একটু সামনে অগ্রসর হলেই দেখতে পারেন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঘুরতে ঘুরতে রাস্তা ছেড়ে বাইশটিলায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন।

বিশাল বাইশটিলার হাওরে নৌভ্রমণের জন্য দূর–দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেকেই আসেন
ছবি: লেখক

আপনি যদি রাস্তা দিয়ে এগোতে থাকেন তাহলে ৮ থেকে ১০ মিনিট পায়ে হাঁটলে পাবেন ছোটখাটো চায়ের দোকান। ছোট এ বাজারটির বিশেষ খ্যাতি গরুর খাঁটি দুধের চায়ের জন্য। মানসম্পন্ন হোটেল বা চা–স্টল না হলেও পাঁচ টাকায় গরুর খাঁটি দুধের চা আপনার ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করে দেবে। এ বাজারের উত্তর দিকে আরও কয়েক মিনিট হাঁটলে পাবেন বাইশটিলার দেখা। আর যদি আপনি ফিরে আসতে চান তাহলে এখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে বসতে পারেন। আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া নেবে ৫০ টাকা। বছরের যেকোনো সময় বাইশটিলা ভ্রমণ উপযোগী হলেও জ্যোৎস্না রাতে সবুজের বুকে রূপালি আলোর খেলা আপনাকে স্বর্গ দর্শনের আনন্দে মোহিত করবে।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে সিলেট মহানগরীতে যাওয়া যায়। সায়েদাবাদ-ফকিরাপুল থেকে দূরপাল্লার বাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত কদমতলী যেতে খরচ পড়ে সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখান থেকে বন্দরবাজার যেতে রিকশায় খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বন্দরবাজার থেকে বিমানবন্দর বাজার বা বাইশটিলা প্রবেশমুখ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত বাইশটিলা
ছবি: লেখক

যেখানে থাকবেন

সিলেট শহরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দরগা গেট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।

বাইশটিলা নৌকার সমারোহ
ছবি: লেখক

শেষ চিরকুট

বাইশটিলা লাগোয়া পথে যেতে যেতে দেখা সবুজ দৃশ্যপট, শিল্পিত লোকালয় পর্যটকদের নজর কাড়ে সহজেই। রাস্তার পাশেই চা প্রক্রিয়াজাতকরণ হওয়ায় নাকে লাগে সতেজ চায়ের মধুমাখা ঘ্রাণ। আসলেই অসাধারণ...! দুই পাশের সবুজ প্রকৃতির ছায়া যেন আছড়ে পড়েছে স্রোতস্বিনীর বুকে। সবুজের সঙ্গে সবুজের কী অপরূপ মেলবন্ধন। আপনার আগামীর জন্য এখানেও ফ্রেমবন্দী করে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। সিলেট যেন সবুজ প্রকৃতির অভয়াশ্রম। আর সব সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের জন্য সেরা সময় এখনই, যখন প্রকৃতির সব বিচিত্র সৌন্দর্য মিশে আছে চাগাছের সবুজ পাতায়। তো এ অপরূপ চায়ের দেশে আপনাকে স্বাগতম...। দেখতে পারেন মালনীছড়া চা–বাগান সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে গাড়িতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চা–বাগানটি পাওয়া যাবে।

ছুটির দিনে সিলেটের নগরীর পাশের বিনোদন স্পটটি বিকেল হলেই ভিড় বাড়ে মানুষের
ছবি: লেখক