প্রকৃতির বন্ধনে আদিনা মুড়ায় এক দিন

মানুষ ভ্রমণপ্রিয়। তাই বিনোদন আর আমোদপ্রমোদের স্বাদ নিতে কার না মন চায়। আবার সেই বিনোদন যদি হয় প্রকৃতির সঙ্গে, আর সঙ্গে যদি প্রিয় বন্ধুরা থাকে, তাহলে আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

দিনটি ছিল রোববার। হঠাৎ কয়েকজন বন্ধু ঠিক করলাম, মনের সব ক্লান্তি দূর করতে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাই, আর বুক ভরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিই। প্রকৃতির কথা শুনতেই সাতজন প্রকৃতিপ্রেমিক রাজি হয়ে গেল এবং সিদ্ধান্ত হলো কুমিল্লা আদিনা মুড়ায় যাব।

আদিনা মুড়া কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি মূলত একটি পাহাড়ের নাম। কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় অপেক্ষাকৃত ছোট পাহাড়কে মুড়া বলা হয়। উচ্চতা আনুমানিক ১০০ ফুট। এর নামকরণ করা হয়েছে চন্দ্রবংশীয় রাজা মানিকচন্দ্রের পূত্রবধূ অদুনার নামানুসারে।

১৯৫৫-৫৬ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জরিপ চালিয়ে ময়নামতির প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বহনকারী যে ৫৪টি স্থান সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট করেছে, এর মধ্যে আদিনা মুড়া ১৭তম।

হাঁটতে শুরু করলাম, সামনে–পেছনে তাকালাম, কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। ভাবলাম হেঁটেই চলে যাই৷ কিন্তু সঙ্গে ছিল চার নারী। হাঁটার পা যেন তাঁদের কামড়িয়ে ধরেছে। গাড়ি নেওয়ার অজুহাত জুড়ে বসল। আর কি করার, একটু অপেক্ষা করলাম, পেছন থেকে তিন চাকার মোটরচালিত অটোরিকশা এল। নিয়ম যদিও প্রতি রিকশায় চারজন, তার বিপরীতে বাড়তি পয়সা পাওয়ার আশায় চালকেরা দ্বিগুণ যাত্রী বহন করে। যাই হোক, গাড়ির ভাড়া ঠিক করে আদিনা মুড়ার দিকে রওনা হলাম। বন্ধুদের মুখ থেকে এর বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে বলে, এ জায়গার বড় বিশেষত্ব হলো পাহাড়ের ওপর সমতল, যা থেকে নিচের ও চারপাশের প্রকৃতি দেখতে খুব সুন্দর। এক দিন স্যার ক্লাসে এই স্থান সম্পর্কে বললেন, তাই জায়গাটি দেখার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল। আজ তা বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে বলে খুব আনন্দ হতে লাগল।

প্রায় ২০ মিনিট অটোরিকশায় ভ্রমণ করার পর আমাদের লক্ষ্য স্থানে পৌঁছে গেলাম। রিকশা থেকে নামতেই চোখ পড়ল ইটের খোদাই করা আদিনা মুড়া নামের বিশাল ফটক। ফটক থেকে উপরে যাওয়ার ছোটবড় ৪৮টি সিঁড়ি। আমরা উপরে উঠতে লাগলাম। ক্লান্তিলগ্নে মনে হচ্ছে, বিশাল চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠছি।

প্রকৃতিপ্রেমিক অনন্যা রব রিপা বলেন, আদিনা মুড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানের একটি। সেখানে আছে পাহাড়ের ওপর সমতল ভূমি, মানুষের বসতি দেখতে ছোট্ট গ্রামের মতো আর চারপাশে ঘিরে আছে জানা–অজানা হাজারো প্রজাতির গাছপালা ও সবজির চাষাবাদ। এখানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা পেলাম।

পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে হয়, একটি গাছ আরেকটি গাছের সঙ্গে ভালোবাসার আলিঙ্গনে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে। সমাজ থেকে যদি হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, মারামারি, হানাহানি ইত্যাদি দূর করে ভালোবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা যেত, তাহলে সমাজটাও প্রকৃতির মতো বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ভরে যেত।

*লেখক: আল-কাউসার আহমেদ, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা।