শেষ হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলন

‘আমরা রাষ্ট্রভাষার সঙ্গে বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু এখনো আমাদের সর্বস্তরে বাংলা চালু হলো না। বাংলা ভাষা সর্বস্তরে চালু করার দাবি জানাই। সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে বাংলার সৌন্দর্য; বাংলার সম্মান–মান সমুন্নত রাখতে হবে। তা দিনে দিনে ক্রমে বাড়াতে হবে।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গত সোমবার মুক্ত আসর ও ছায়ানট (কলকাতা) আয়োজিত অনলাইনে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি।

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলী সদস্য এমরান জাহান বলেন, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলনের সেই হাজার বছর ধরে। একসময় ব্রাহ্মণরা, আর্যরা এসে বলেছিল, বাঙালির ভাষা পাখির ভাষার মতো। সেই সময়ে সংস্কৃত ভাষার সঙ্গের যুদ্ধ করতে হয়েছে। পাল আমলে রাজভাষা বাংলা হয়নি। যদিও সেই সময়ে “চর্যাপদ” রচিত হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষা অবহেলায় থেকেছিল। ১১০০-১২০০ সালে যখন সেনরা শাসনক্ষমতায় আসে, সেই সময়েও বাংলা ভাষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। সুলতানি-মুঘল আমলে বাংলা ভাষা সরকারি হয়নি। তারপর ইংরেজ আমলের তো আমরা সবাই জানি। পাকিস্তান আমলে এসে প্রশ্ন উঠল রাষ্ট্রভাষা কী হবে? সেখানে বাংলা রাষ্ট্রভাষা বা রাজভাষা হিসেবে স্থান পায়নি। ঘটল ৫২ সালে রক্তাক্ত ঘটনা। বাংলা ভাষার জন্য যুগ যুগান্তর ধরে যুদ্ধ করতে হয়েছে কখনো ধর্ম, কখনো রাজভাষার সঙ্গে। বাংলা ভাষা ঠিকে আছে এখনকার মানুষের ভাষা, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভাষা বলে।’

এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এস এ মনসুর আহমেদ, কবি শামীম আজাদ, নেপালের শিক্ষক মুকেশ শ্রেষ্ঠা, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলী সদস্য এমরান জাহান, আবেদা সুলতানা, প্রশিক্ষক কাজী সামিও শীশ, মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ, কলকাতা ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক প্রমুখ।

চার দিনের সম্মেলনের আলোচনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, ভারতের শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদুর রহমান, নজরুলসংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুভ্র দত্ত, রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার, মঞ্চ ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন, নজরুলসংগীতশিল্পী ও শব্দসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ, ভারতের কবি সৈয়দ হাসমত জালাল, গবেষক ও লেখক মানিক মোহাম্মাদ রাজ্জাক, অস্ট্রেলিয়া থেকে শিল্পী রহমান, গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, শুভ্র জ্যোতি চাকমা ও হাসিনুল ইসলাম, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক মিতালী সরকার, আসামের বিশিষ্ট গবেষক ড. রেজাউল করিম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. বদরুল হুদা খান, অস্ট্রেলিয়া থেকে শিল্পী রহমান, পেরুর বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক ওয়াল্টার ভিয়ানোয়েভা, নেপালের শিক্ষক মুকেশ শ্রেষ্ঠা, রাশিয়ার শিক্ষাবিদ ভিক্টোরিয়া চারকিনা, প্রিয়জিৎ সরকার দেব, জার্মানি থেকে হাবিব বাবুল, গবেষক হাসিনুল ইসলাম, নজরুল সংগীতশিল্পী শহীদ করির পলাশ, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুন আখতার, আহমদে হেলাল, অনুবাদক এ এইচ এস মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা, সংগীতশিল্পী শায়লা রহমান, মুক্তবন্ধু নাফিজা রহমান প্রমুখ।

সম্মেলনের সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি ও স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন।