বিজয়ের পঞ্চাশে, স্কাউটস এগিয়ে যাক উল্লাসে

বাংলাদেশ স্কাউটস

পৃথিবীর বুকে এক অনন্য সংগঠনের নাম। বয়স্কদের নির্দেশনায় বালক-বালিকা, যুবক-যুবতীদের নিয়ে পরিচালিত একটি অরাজনৈতিক, শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলো স্কাউটিং। ১৯০৭ সালে সুদূর ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরের প্রফুল্ল ও মুক্ত মনের অধিকারী একজন ব্যক্তি এই সংগঠনের সূচনা করেন। যার নাম রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল। পুরো বিশ্ব তাঁকে বি পি নামে চেনে। মাত্র ২০ জন বালক নিয়ে তিনি এই যাত্রা শুরু করলেও আজ প্রায় সব দেশের বালক–বালিকারা স্কাউটিংয়ের এ মুক্ত আন্দোলনের পথযাত্রী। যাদের লক্ষ্য, সৃষ্টিকর্তা ও দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করা। সব সময় অপরকে সাহায্য করা ও স্কাউটিংয়ের সব আইন মেনে চলা। প্রত্যেক স্কাউট সব সময় সাধারণ বালকের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকে। কেননা স্কাউটসরা আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী। তারা সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে। তারা তুলনামূলক সাধারণ বালকের চেয়ে বেশি বিনয়ী হয়। স্কাউটসরা জীবের প্রতি সদয়। তাদের কাজের দ্বারাই বোঝা যায়, তারা জীবপ্রেমী। শুধু তা–ই নয়, তারা মুক্ত আকাশে পাখির মতো যেমন ভ্রমণ করতে পছন্দ করে, তেমনি তারা পাখির মতোই সদা প্রফুল্ল। এ কারণে তারা সব বাধা খুব সহজেই অতিক্রম করতে পারে।

স্কাউটসরা অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে জানে। তারা মিতব্যয়ী। অযথা অর্থ খরচ করে না। শুধু তা–ই নয়, তারা যখন কোনো কথা বলে, কোনো কাজ করে, বা কোনো লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে, তখন প্রতিটি বিষয় চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পিতভাবে করে। স্কাউটসরা চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল হয়। সমাজসেবা, সমাজ উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নতির পথে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। স্কাউটসরা সদা প্রস্তুত থেকে সব সময় নিজের সাধ্য অনুযায়ী অন্যের সেবা করতে প্রস্তুত। তাদের স্লোগান হলো, প্রতিদিন কারও না কারও উপকার করা।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই এ আন্দোলনে যুক্ত হওয়া যায়। পরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও গ্র্যাজুয়েশন পর্যায়েও স্কাউটিং করার সুযোগ রয়েছে। স্কাউটিংয়ের তিনটি শাখা—কাব স্কাউট, স্কাউট এবং রোভার স্কাউটস। তাদের নিদিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ পদ অর্জন করার মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে স্কাউটসরা পুরস্কারের লোভে কখনো কাজ করে না; বরং দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ মহান আন্দোলন শুধু ইংল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং বিশ্বের প্রায় সব দেশেই স্কাউটিং আন্দোলন চলমান। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের অংশ থাকলেও স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মুক্ত চিত্তে স্কাউটিংয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আজ বিজয়ের পঞ্চাশে বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ স্কাউটস রয়েছে। যারা সব সময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। নিজেদের আত্মিক উন্নয়ন ও দেশের জন্য সব সময় কাজ করছে। ‘সদা প্রস্তুত থেকে যথাসাধ্য সেবা প্রদান’ এ স্লোগানকে অন্তরে ধারণ করে সব সময় অন্যের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়। আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে, টিভিতে বা ইন্টারনেটে দেখে থাকি, দেশে কোনো দুর্যোগ এলে সবার আগে তারা দৌড়ে যায়। দেশের প্রতিরক্ষাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা কাজ করে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিনির্বাপন, উদ্ধারকাজসহ বিভিন্ন ধরনের সাধারণ ট্রেনিং তারা করে থাকে। যেকোনো অবস্থায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া তাদের বড় গুণ। বাংলাদেশ স্কাউটস ১৩টি অঞ্চলে বিভক্ত। যার তিনটি বিশেষ অঞ্চল এবং বাকি ১০টি সাধারণ অঞ্চল। তারা সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী পোশাক পরে। মাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক এবং জাম্বুরি, ক্যাম্পুরি, মুট ও আন্তর্জাতিক ক্যাম্পিংয়ের মতো বড় বড় ক্যাম্পে তারা অংশগ্রহণ করে এসব শিক্ষা হাতে–কলমে শিখে থাকে।

স্কাউটসরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। মাদকাসক্ত কোনো ছেলেমেয়েকে স্কাউটিংয়ে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে তারা সুন্দর জীবন গড়ে। অসামাজিক বা অনৈতিক কাজের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং বিজয়ের এই পঞ্চাশে আমাদের দেশের বালক–বালিকাদের অবশ্যই এই সংগঠের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। তাহলে আমাদের সুন্দর একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রমবোধ সৃষ্টি হবে। সুন্দর সমাজ ও দেশ বিনির্মাণের পথ সুগম হবে। কেননা স্কাউটসরা তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা ব্যাডেন পাওয়েলের উক্তি অন্তরে ধারণ করে, বিশ্বাস করে এবং তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ‘পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছ, তার চেয়ে কিছুটা হলেও সুন্দর করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করো, তাহলে মরেও শান্তি পাবে।’

লেখক: মো. আকাদুল্লাহ, শিক্ষার্থী ও রোভার স্কাউট-ঢাকা কলেজ