প্রাথমিকে সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগে ঘুচবে বেকারত্ব, কমবে সংকট

শিক্ষক
প্রতীকী ছবি

করোনা মহামারি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। অসংখ্য মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। বেকারত্বের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। বিদ্যমান শিক্ষিত বেকার, নতুন যুক্ত বেকারদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ প্রকট হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য চাকরির সার্কুলার হয়নি। বড় কোনো নিয়োগ পরীক্ষাও হয়নি। এভাবে অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। অনেকের বয়স শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বলা বাহুল্য, করোনাত্তোর সময়ে শিক্ষিত বেকারদের এক দারুণ দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২০ এই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বেকারদের মধ্যে অনেকটা আশার বীজ উদিত হয়েছিল। কারণ, চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বলা হয়েছিল, প্রায় ৩২ হাজার ৫ শ নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছিলেন, প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। কিছুদিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিবও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন যে প্রায় ৫৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক শেষ হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। গত বছরগুলোর নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে তিনের এক অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে এবারও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে।

প্রাথমিকের ইতিহাসে এত বড় নিয়োগ দ্বিতীয়টি নেই। তাই সবাই কমবেশি আশায় বুক বেঁধেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সহসাই সেই আশায় গুড়ে বালি ছিটিয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, ৩২ হাজারই নিয়োগ দেওয়া হবে অর্থাৎ, পদসংখ্যা বাড়ছে না। যা প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার প্রার্থীর মন ভেঙে দিয়েছে। ৩২ হাজার নিয়োগ দিলে অনেকের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।

প্রশ্ন হলো, যদি ৩২ হাজারই নেওয়া হবে, তাহলে ৪৫ হাজারের কথা কেন চাউর করা হলো? এত সংখ্যক (পাঁচের এক অনুপাতে) প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাই-বা কেন নেওয়া হলো?

এটা স্পষ্ট যে চলমান প্রকল্প পিইডিপি-৪ অনুযায়ী, প্রাথমিকে বহুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাও স্নাতক ধরা হয়েছে। এমনকি এবারের লিখিত পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরধারী মেধাবী প্রার্থীরা উত্তীর্ণ হয়েছে।

তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন, এবারের নিয়োগে সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। এতে করে বেকারত্ব ঘুচবে। ৪৫ হাজার প্রার্থী চাকরি পেলে ৪৫ হাজার পরিবারে একজন চাকরি পাবেন। সবার মুখে হাসি ফুটবে। প্রাথমিক শিক্ষা খাতে যে প্রকট শিক্ষক-সংকট রয়েছে, তা-ও দূরীভূত হবে।

*লেখক: মো. নজরুল ইসলাম, চাকরিপ্রত্যাশী