আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমাদের সুখ–দুঃখের কথা

ভোর পাঁচটা বাজে। ঘুম ভেঙে গেছে। মারিয়া আমার পাশে নেই। আন্দামান হাসপাতালে। আমি তাকে সেখানে রেখে যখন ফিরেছি তখন রাত ১১টার বেশি বাজে। জেসিকা হোটেলকক্ষে একা। সে জানে না আমি বা তার মা মারিয়া কী অবস্থায় আছি! টেলিফোন শুধু তখনই কাজ করে যদি আশপাশে ওয়াই–ফাই থাকে। আমরা বহু বছর পর একসঙ্গে ছুটিতে এসেছি। সঙ্গে রয়েছে ছেলে জনাথন, মেয়ে জেসিকা এবং স্ত্রী মারিয়া। ছোটবেলার মতো করে সবাই মিলে একসঙ্গে ভ্রমণ করার ইচ্ছেটি সবার মনে জাগে এ বছরের শুরুতেই। এখন আর কেউই ছোট নেই যে আমার বা মারিয়ার ওপর নির্ভরশীল। সবারই ব্যক্তিগত মত রয়েছে, তারপরও আমি আবদার করেছি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যাব এবং থাকব ক্রাবি দ্বীপে। প্রথম দিকে সবাই প্রশ্ন করেছে, কেন ক্রাবি? হাজারো দ্বীপ থাকতে কেন তুমি ক্রাবি পছন্দ করলে? তারপর আবার সেখানে আগেও একবার গিয়েছিলে? আমি বললাম, আমরা গেছি তবে তোমাদের মা যায়নি সেখানে, তা ছাড়া সেখান থেকে তোমরা ইচ্ছে করলে অন্যান্য জায়গায়ও যেতে পারবে। সবাই মোটামুটি রাজি হলেও জনাথন নিজের মতো করে টিকিট কেটেছে স্টকহোম-ব্যাংকক, ব্যাংকক-ক্রাবি। আমি, মারিয়া ও জেসিকা চার্টার ট্রিপে করে স্টকহোম-ফুকেট, ফুকেট-ক্রাবি। এভাবে টিকিট কেটেছি।

জনাথন উঠবে ছোট্ট একটি দ্বীপে, যেখানে যেতে বোট লাগবে এবং শুধু হোটেলের অতিথি এবং কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কেউ সে দ্বীপে যেতে পারবে না। আমাদের প্যাকেজ জার্নি, তার মানে যাওয়া, আসা এবং থাকা অন্তর্ভুক্ত। এদিকে ছুটি ১০ দিনের, তার মধ্যে দুই দিন যাওয়া–আসার মধ্যে, বাকি আট দিন আমাদের একই হোটেলে থাকতে হবে। জেসিকার চিন্তা, যদি হোটেলের সবকিছু মনঃপূত না হয়, তাহলে তো সর্বনাশ! আমি বললাম কীভাবে সর্বনাশ। সে উত্তরে বলল, যদি আবহাওয়া খারাপ হয় তখন কোথাও ঘোরা হবে না, বাধ্য হয়ে হোটেলে সময় কাটাতে হবে, সে ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভালো এবং পরিষ্কার পরিবেশের সুইমিংপুল, জিম, সুন্দর বাগান, সাগরের দৃশ্য, খাবারের মান ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে, আর যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তখন তো শুধু রাতে হোটেলে ঘুমাতে আসতে হবে। প্যাকেজ জার্নির এটাই একটি সমস্যা, সব ঠিকমতো করলেও ভাগ্য বলে যে কথাটি রয়েছে তাকে ভুলে গেলে চলবে না। ভাগ্য ভালো হলে সব ঠিকঠাক, তা না হলে গেল পুরো ভ্রমণের বারোটা বেজে! যাহোক প্রথম দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত সবকিছু মাথায় রেখে প্ল্যান করি, এবারের ভ্রমণ সেই ফেব্রুয়ারি মাসে, বুকিং নিশ্চিত করি জুনে। ইনস্যুরেন্স থেকে শুরু করে কোভিড পাস এবং ভ্যালিড পাসপোর্টসহ ছুটি মঞ্জুর—কাজগুলো সময়মতো ম্যানেজ করা। জনাথন তাঁর মতো করে পরিকল্পনা করেছে যেন তার টেনিস ট্যুরে বড় আকারে ব্যাঘাত না ঘটে। সে তার জাপান ট্যুর শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্টকহোমে আরল্যান্ডা বিমানবন্দরে আসবে, আর আমরা একই দিনে একই সময়ে বোর্ডিং শেষে হাই–হ্যালো বলে যার যার প্লেনে উঠব। আমাদের ভ্রমণের সপ্তাহমতো বাকি। হঠাৎ পুলিশ কর্তৃপক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছে।

আমাদের পাসপোর্ট সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারবে না, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সময়মতো পাসপোর্টের সবকিছু জোগাড় করতে সুইডিস পুলিশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এত আগে সবকিছু প্ল্যান করেছি, তারপরও ঝামেলা? এদিকে সময় কম, আমার এবং মারিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে, এটা আমরা জানতাম, তাই অনেক আগেই নতুন পাসপোর্টের জন্য যা যা করণীয় করেছি। পাসপোর্ট অফিসে সমস্যা চলছে দুই বছর ধরে, তা–ও জানি। সুইডেন পাসপোর্ট তৈরির যে মেশিন ব্যবহার করে সেটা ফিনল্যান্ডের সঙ্গে শেয়ার করে। পাসপোর্ট তৈরি করতে যে কাগজ ব্যবহার করে সে কাগজ মূলত তৈরি হয় রাশিয়ায়। যুদ্ধ চলছে ইউরোপে, সুইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে, এমনকি ন্যাটো জোটে যোগ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। পাসপোর্ট সময়মতো ডেলিভারি না দিতে পারার কারণ জানা সত্ত্বেও পুলিশ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে শুধু বলে দিলাম, নাগরিকের নিরাপত্তা, অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা এই তিনটি কাজই তো করার জন্য আছ অথচ তার একটাও এখন আগের মতো হচ্ছে না কারণ কী, জানতে পারি? আমার প্রশ্নে চমকে গেলেও তার গ্রহণযোগ্য তেমন কিছু বলার ছিল না, শুধু বললেন, অস্থায়ী একটি পাসপোর্ট এয়ারপোর্ট পুলিশ থেকে নিতে। অস্থায়ী পাসপোর্ট শুধু একবারই ব্যবহার করা যায় স্বল্প মেয়াদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে। এটা নাগরিকদের বিশেষ কারণে দেওয়া হয়ে থাকে এবং এ পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টার আগে পাওয়া সম্ভব নয়।

ভ্রমণের আগের দিন আমি এবং মারিয়া আমাদের বর্তমান পাসপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে পুলিশ পাস-কন্ট্রোলে গেলে তারা বলল যেহেতু আমরা ডিসেম্বরের ৩ তারিখে সুইডেনে ফিরব সে ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাসপোর্টের দরকার নেই। আমি বললাম তাহলে তোমার হেড অফিস, ফরেন মিনিস্ট্রি, থাই এম্বাসি এমনকি সব রাষ্ট্রের হোম পেজে লেখা রয়েছে, কমপক্ষে ছয় মাসের ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকতে হবে? পুলিশ বলল, কিছু ব্যতিক্রম আছে, যা সবাই জানে না। তা ছাড়া সুইডিশ নাগরিকদের জন্য বিশেষ নিয়মকানুন রয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। যাহোক পরদিন সকালে বাড়ি থেকে ট্যাক্সি করে রওনা দিলাম থাইল্যান্ডের উদ্দেশে।

বিমানবন্দরে জনাথনকে বিদায় দিলাম, সে থাই এয়ারওয়েজে করে রওনা দিল ব্যাংককের উদ্দেশে। আমরা ঘণ্টাখানেক পরে ট্যুই বিমানবন্দরে রওনা দিলাম ফুকেটের উদ্দেশ্যে। একটানা ১৩ ঘণ্টা পর এসে ল্যান্ড করলাম ফুকেটে। ফুকেটে সকাল সবে ছয়টা বাজে, মানে সুইডেনে তখন রাত ১২টা।

চেকিংয়ের পর্ব শেষ হতেই দেখি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের গাইড। গাড়িতে উঠে পড়লাম ঝটপট করে। গাড়ি চলতে শুরু করল দ্বীপের মধ্য দিয়ে। দুই পাশের পরিবেশ দেখে মনের জানালা খুলে গেল, মনে হতে লাগল এই তো সেদিন আমি তোমাকে দেখেছি। ঢাকার অদূরে মাগুরা থেকে যখন নহাটা গ্রামে ভ্যান বা রিকশা করে গ্রামের বাড়ি যেতাম ঠিক তেমন একটি অনুভূতি এসেছিল ক্ষণিকের জন্য। কিছুক্ষণ যেতে দেখি রাস্তার ধারে ডাব, আম, জামরুল, থাইল্যান্ডের লিচু, নানা রকমের কলা। ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি থামাও। গাড়ি থেমে গেল, হঠাৎ সবাই একটু অবাক হয়ে গেল! গাড়ি কেন থামালাম। পুরো গাড়িতে দশজনের মতো হবে, বললাম সবাইকে একটি করে ডাব দাও। যাত্রীরা তো অবাক! চেনা নেই, জানা নেই, হুট তরে ডাব খেতে দিল, না চাইতেই! আমি শুধু ডাব নয়, অনেক কিছু কিনলাম। মেয়ে এবং তার মা মুগ্ধ হয়ে আমাকে দেখছে, দেখছে আমার নতুন রূপ। হঠাৎ জেসিকা প্রশ্ন করল, বাবা তুমি কি তোমার নিজ দেশের কথা ভাবছ? বললাম, ‘কিছুটা’। নিজেকে আবেগের থেকে সরিয়ে টেলিফোনটা ধরে কিছু ছবি কিছু ভিডিও করতে করতে হোটেলে এসে চেকিংয়ের পর্ব শেষ করতেই জনাথনের টেলিফোন। সে–ও উঠেছে তার হোটেলে। দুই ঘণ্টা পর একসঙ্গে লাঞ্চ করব বলে সময় এবং স্থান ধার্য করে হোয়াটসঅ্যাপে থাই ট্যুর নামে একটি গ্রুপ খুলেছে।

প্রথম দেখা পুরো পরিবার বহু বছর পর এবং একসঙ্গে তা–ও ২৭ এবং ২১ বছরের ছেলেমেয়ে একসঙ্গে আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জগুলো ঘুরব, মজা করব, ভাবতেই একটু অন্য রকম মনে হতে লাগল। জনাথন ক্রাবি দ্বীপের যে রেস্টুরেন্ট পছন্দ করেছে, তার নাম ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট অনেক ধরনের খাবারের অর্ডার দিয়েছে। বেশির ভাগই শাকসবজি এবং মাছের। খাবারগুলো মজা করেই সবাই খেলাম যদিও জেসিকা কিছুটা সাবধানতার সঙ্গে প্রথম দিনের খাবারগুলো খেল। খাবার টেবিলেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেল কবে, কখন, কোথায় কীভাবে যেতে হবে এবং কার কী করা বা দেখার শখ, সেটা যেন হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করি, যাতে কারও কোনো দেখা বা ঘোরার স্বপ্ন অপূর্ণ না থাকে।

মজার ব্যাপার হলো, সবাই পছন্দ করেছে দ্বীপ ঘুরবে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাবে, সাগর আর পাহাড়ের সঙ্গে পুরোটা সময় কাটাবে। পানির পিপাসা লাগলে ডাবের পানি আর খিদে লাগলে থাই সি ফুড এবং সন্ধ্যা হলে হোটেলে ফিরে গোসল শেষে একসঙ্গে ডিনার, তারপর গ্রামের বাজারগুলো একটু ঘুরে দেখা, একটু এদের জীবনব্যবস্থাকে বুঝতে চেষ্টা করা, তারপর ক্লান্তিকে শান্ত করতে ঘুম। সাগরের ঢেউ ফ্যানের বাতাস সব মিলে রাত হঠাৎ কখন যে সকাল হয়ে গেল, জানা হলো না। সাগরের পারে ভোরের বায়ু সত্যি নিদারুণ এক অপূর্ব মনোমুগ্ধকর অনুভূতি। সূর্য দেখার আগে স্রষ্টার প্রতি কিছুক্ষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সূর্যকে সঙ্গে রেখে আজ চারটি আইল্যান্ড তাদের নিজ নিজ গুণ নিয়ে হাজির হয়েছে। পাহাড় কথা বলে না, কথা বলতে সাহায্য করে। সাগর দেখে না, সে দেখায়। প্রতিটি পাহাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে আদেশের অপেক্ষায়। সাগর হাজার চেষ্টা করেও তার দায়িত্ব থেকে বিচলিত হতে পারছে না। শুকনো ভেজা নানা ধরনের বালুর কণাগুলো ঝকঝক করে পাহাড়ের চারপাশ চমৎকার পরিবেশে শীতল পাটির রূপ ধারণ করে অপেক্ষা করছে কখন পর্যটকেরা সেখানে আসবে আর শান্ত শীতল হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। কেউ সাদা দেহকে পুড়িয়ে করছে ব্রাউন। কেউ ব্রাউন থেকে কালো। আমি তেমন কয়েকটি দ্বীপে সময় কাটিয়েছি।

যেসব সৈকত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করেছি, তার মধ্যে রয়েছে রাইলি বিচ, চিকেন দ্বীপ, হং দ্বীপ, মানকি দ্বীপ, জেমস বন্ড দ্বীপ, বাম্বু দ্বীপ, লাঙ্কবি দ্বীপ, পিপি দ্বীপ, মায়া বে বিচ,  ট্যুব এবং মোর দ্বীপ।

প্রথমে মনে হবে, প্রতিটি সৈকত প্রায় একই রকম দেখতে। হয়তো ঠিক যদি বলি বাংলাদেশের সবাইকে দেখতে অনেকটা ভারত বা পাকিস্তানিদের মতো লাগে তাহলে অনেকে খেপে যাবে কারণ তার মধ্যে পার্থক্য বা ভেদাভেদ করার মতো বোধগম্যতা তৈরি হয়নি। যা কিছু দেখি না কেন, তাকে হৃদয় দিয়ে দেখতে হবে, ভাবতে হবে, অনুভব করতে হবে, তারপর শুধু পার্থক্য নয় স্রষ্টার ক্ষমতা, দক্ষতা, মহানুভবতাসহ সবকিছু বোঝা যাবে।

আরও দুটি দ্বীপ যেমন ট্যুব ও মোর দ্বীপ। জোয়ার–ভাটার কারণে পানি যখন কমতে থাকে তখন এই দুই দ্বীপের পাহাড়ের মধ্যে চমৎকার রাস্তা তৈরি হয়। থাইল্যান্ডে বলে ‘Unseen in Thailand’। এই মিরাকেল রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন দুই পাশে সাগর আর মাঝখানে এই পথ, পথের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে যে কি মজা ছিল, সে অনুভূতি না এলে তো হবে না। পাহাড় দুটির দূরত্ব খুব একটা বেশি না, ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের দূরত্ব হবে। সকালে বোটে করে দ্বীপ দুটো ভ্রমণ করেছি, তখন ছিল পানিতে ভরা, পরে বিকেলে এসে দেখি দ্বীপ দুটির মাঝে স্বচ্ছ বালুর ঝকঝকে রাস্তা। নৌকা ছাড়া এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপ যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন মনে পড়ে গেল, মনে পড়ে গেল সেই মুসা (আ.) নবীর বিস্ময়কর গল্পের কথা। আমি স্রষ্টার ক্ষমতা দেখে অনুভূত হয়েছি, একই সঙ্গে ভেবেছি জোয়ার–ভাটার ক্ষমতা, মমতা এবং দক্ষতা!

আমরা আরও যে দ্বীপগুলো ভ্রমণ করেছি, তার মধ্যে রয়েছে মায়া বে দ্বীপ, হং দ্বীপ, হং লাগুন, চিকেন এবং পাদা দ্বীপ। মনে কি পড়ে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তার ফিল্ম ‘দ্য বিচ’ ছবির কথা? এ ছবি করে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন। মূলত মায়া বেতে পুরো ছবির শুটিং হয়েছে। মায়া বের চেয়ে সুন্দর আছে কি অন্য কোনো বিচ আমার জানা নেই। তারপর যেসব দ্বীপের সঙ্গে ভালোবাসা গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে হং দ্বীপ এবং হং লাগুন, চিকেন এবং পাদা দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। হং দ্বীপে স্নোরকেল করা, ব্লু লেগুনে কিছুক্ষণ সময় কাটানো এবং মাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ছিল এক বিশাল ঘটনা। সাগরের নানা রঙের মাছগুলো যখন আমাকে ঘিরে আছে তখন সবার চোখ আমার দিকে। সবাই ভাবছে কীভাবে সম্ভব? আমার মনে হচ্ছিল, একটু রুটি দিলে নিশ্চয়ই মাছ আসবে, যে ভাবনা সেই ফল। অত মাছ সেদিন আমার চারপাশ ঘিরে ছিল যা দেখে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করেছিল।

ফুকেট দ্বীপ পানিপথে খুব একটা বেশি দূরে নয়। সেখানে মূলত গিয়েছিলাম জেমস বন্ড দ্বীপ দেখতে। কী রহস্য রয়েছে হাজার দ্বীপের মাঝে জেমস বন্ড দ্বীপে এবং কেন জেমস বন্ড মুভিতে এই দ্বীপ বেছে নিয়েছে? দ্বীপটিকে দেখলেই বোঝা যায় কেন জেমস বন্ড নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে জেমস বন্ডের ‘দ্য ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন গান’ চলচ্চিত্রের শুটিং হয় এই দ্বীপে। সেই থেকে এটা বেশ বিখ্যাত এবং নামও হয়ে গেছে জেমস বন্ডের নামেই।

হঠাৎ একদিন ল্যাঙ্কবী দ্বীপে যে দ্বীপ মূলত মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন, অতীতে সেখানে ঘুরেছি এবং দেখেছি সে প্রায় ২৫ বছর আগের দেখা দ্বীপটি। ল্যাঙ্কবী দ্বীপের ওপর আমার একটি লেখা রয়েছে, যা অতীতে পাবলিশ হয়েছে নানা পত্রিকায়।

ভ্রমণ শেষ হওয়ার তিন দিন আগে আমরা পিপি দ্বীপ ভ্রমণে আসি। পিপি আইল্যান্ডে দেখার মতো রয়েছে কয়েকটি ছোট–বড় ব্লু লেগুন, যা সত্যিই চমৎকার। আগেই বলেছি প্রকৃতিকে যদি ভালোবাসা না যায়, তবে জানি না অর্থ এবং সময় নষ্ট করা ঠিক হবে কি না! ভালোবাসা যেমন ধরা বা ছোঁয়া যায় না তবে তা অনুভব করা যায়। আমার মনে হয় প্রকৃতি যেমন দেখা যায় তেমন অনুভব করা যায়, শুধু অনুভবে হৃদয় অনুভব করে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে।

পিপি দ্বীপ ভ্রমণ শেষে ফিরতে পথে প্রচণ্ড ঝড়–বৃষ্টি শুরু হয় সাগরের মধ্যে। সবাই একটু ভয়ে আছি তারপর প্রচণ্ড গরম। পরে চড়া বৃষ্টিতে ভিজে হোটেলে ঢুকতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেল। সূর্যকে আজ আর দেখা যাবে না। হোটেলে ঢুকেই তাড়াহুড়ো করে গোসল শেষ করলাম সবাই। ডিনার খেতে যাব। হঠাৎ মারিয়ার প্রচণ্ড জ্বর। দুই দিন আগে থেকেই তার মাথাব্যথা, গলাব্যথা করছে, আমরা ভেবেছি প্রচণ্ড গরম তারপর অনিয়মিত বৃষ্টি, ঠান্ডা লাগতে পারে। সাধারণত এ সময় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কারণ, এখন এখানে শীত, কিন্তু দুঃখের বিষয় জলবায়ুর এমনভাবে পরিবর্তন হয়েছে, বোঝা কঠিন কখন কী হয়। আমরা নিজেরাই যখন নিজেদের শত্রু হয়েছি, তখন কার কী আসে যায় পৃথিবী ধ্বংস হলে!

আজ সকালে মারিয়া কিছুটা ভালো বোধ করছে। বললাম চলো নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করি, আজ আর বাইরে যাব না। আমার বাংলাদেশে কয়েকটি ছোট ছোট প্রজেক্ট রয়েছে তার মধ্যে যেমন অতীতে বলেছি যেমন হাসির মা যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্র থেকে তেমন কিছু পায়নি। আমরা অনেক মিলে তাকে একটি ঘর তৈরি করতে সাহায্য করছি, ছোট একটি শিশুর অপারেশনের কাজ চলছে ঢাকা হাসপাতালে সে বিষয় একটু নজর দেওয়া এবং নবগঙ্গা নদীর ধারে একটি সুন্দর পার্ক এবং নদীর ঘাটটিকে মেরামত করা ইত্যাদি। ফাঁকে ফাঁকে কাজগুলোর অগ্রগতি জানতে চেষ্টা করছি যখনই একটু সময় হচ্ছে। তারপর প্রতিদিনই চেষ্টা করেছি কোথায় কী করছি, দেখছি, যতটুকু পারছি সবার সঙ্গে শেয়ার করছি আমার মতো করে, কারণ নতুন প্রজন্ম বিশ্বকে দেখতে পাবে তাদের মতো করে, গড়তে পারবে একটি সুন্দর পৃথিবী—এ বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড টু লিভ।

জনাথন জেসিকা পিপি দ্বীপে আরও দুদিন ছিল। আজ হেটেলে আমি এবং মারিয়া, সকালের ব্রেকফাস্টে সবে বসেছি। মারিয়া সকালে গরম কিছু খেতে পছন্দ করে না শুধু এক পিচ ব্রেড এবং চিজ সঙ্গে এক কাপ চা, সামান্য মধু হলেই সে খুশি। আমি কলা এবং পরোটা নিয়ে বসেছি। হঠাৎ মারিয়া বলল, তার একটু মাথা ঘুরছে এবং একটু বমি বমি ভাব এসেছে। আমি তার ঘাড়ের ওপর হাতটি দিয়ে সবে বলছি, মারিয়া এখন কেমন লাগছে? মারিয়ার মুখে কথা নেই, মনে হলো সে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল শান্ত হয়ে। আমি মারিয়া মারিয়া করছি কোনো কথা নেই, নিশ্বাস বন্ধ, পালস নেই এ অবস্থায় আমি চিৎকার করে বলছি, প্লিজ সামবডি কল আ অ্যাম্বুলেন্স। সবাই অবাক! জানি না কে কী করছে! কে কী ভাবছে! তবে আমার ভাবনায় শুধু একটিই প্রশ্ন স্রষ্টার কাছে—আমাকে তুমি একটুও সুযোগ দিলে না? আমাকে একটু চেষ্টা করতে দাও, তুমি না বলেছ চেষ্টা যে বা যারা করে তাদের আশা তুমি পূরণ করো! হঠাৎ হবে ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ বছরের একটি হ্যান্ডসাম ছেলে, বেশ দূরের একটি টেবিল থেকে দ্রুতগতিতে এসে মারিয়ার হাত ধরে পালস এবং ঘড়ির কাঁটা দেখছে একই সঙ্গে মারিয়াকে আমার সাহায্যের অপেক্ষা না করে দুই হাত দিয়ে উঁচু করে কিছুটা দুরে ফ্লোরের ওপর শুইয়ে দিয়ে হাতের পালস নির্ণয় করতে করতে বলল আমি নিজেই ডাক্তার, আমার বাড়ি জার্মানিতে। এরই মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়ে গেছে। দ্রুতগতিতে তারা মারিয়াকে নিয়ে চলে গেল। আমি দৌড়ে হোটেলের রুমে গিয়ে মারিয়া এবং আমার পাসপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অত্যন্ত দ্রুত সময়ে তারা জেনেছে, মারিয়ার প্লাটিলেট ৬০ হাজারের নিচে। ইদানীং এশিয়ায় ডেঙ্গু মশার কারণে এমন ঘটনা এসব দ্বীপে বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তারপর প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টির কারণে মশার দাপট বেশ বেশি, যা আমরা লক্ষ করেছি। নানা রকমের পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার পর দেখা গেল ডেঙ্গু নয়। তাহলে কি? এ প্রশ্নের উত্তর দ্রুত জানা দরকার। এদিকে আমি SOS–এ যোগাযোগ করেছি। পুরো ঘটনা বলার পরপরই তারা দ্রুত মারিয়াকে শহরের বড় হাসপাতালে মুভ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি নিজে এ সময় সত্যিই খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

জনাথন আজ পিপি দ্বীপ থেকে মুভ করবে ফুকেটে এবং জেসিকা দুটোর বোটে আও নং বিচে ফিরবে। তাকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের, অথচ কী হতে কী হয়ে গেল! জেসিকাকে নেটের সমস্যার কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। জনাথনকে টেক্সট করে বিষয়টি জানিয়েছি। সে তার ফুকেট ভ্রমণ বাতিল করে দুই ভাইবোন দুটোর দিকে হাসপাতালে এসেছে। জনাথন জেসিকা যখন হাসপাতালে মারিয়া তখন চোখ খুলেছে সবকিছু বিষয়ে সে অবগত, তবে খুবই দুর্বল। প্রশ্ন এখনো কি কারণে প্লাটিলেট লো? আমাদের সুইডেনের মেডিকেল জার্নাল আমরা সরাসরি দেখতে পারি, যেমন কবে কখন কী রোগ হয়েছিল, কেন এবং কী ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে। হাসপাতালের ওয়াই–ফাই ব্যবহার করে মারিয়ার পাচওয়ার্ডে তার মেডিকেল জার্নালে ঢুকে দেখি ২০১৬ সালে একটি অ্যানালাইসিসে ধরা পড়েছে তার শরীরের প্লাটিলেট লো। যার ফলে শরীরে কোনো রকম ইনফেকশন দেখা দিলে শরীর দুর্বল হয়। এদিকে থাইল্যান্ডে গরমের কারণে শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়া এবং তিন দিন ধরে জ্বর সব মিলে এমনটি হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে। প্রথম সন্দেহ ডেঙ্গু এখন হতে পারে কারণ? আমি বললাম, জ্বর হওয়ার কারণ কি তাহলে? ডাক্তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে টিম গঠন করে তাড়াতাড়ি করে কোভিড টেস্ট করে জানতে পারল মারিয়ার করোনা হয়েছে। এতক্ষণে বিষয়টি পরিষ্কার, কেন শরীরে ইনফেকশন আর কেনই–বা প্লাটিলেট লো? এখন নতুন সমস্যা সেটা হলো আমাদের ফ্লাইট ব্যাক টু সুইডেন-এ, ডিসেম্বরের ৩ তারিখে। হোটেল থেকে পিকআপ করবে সকাল ৬টাই, ফ্লাইট বেলা ১১টাই। কী হবে এখন যদি আগামীকাল বিকেলের মধ্যে মারিয়া সুস্থ না হয়? তা হলো সে ফ্লাই করতে পারবে না। ৩ তারিখে ফ্লাই না করতে পারলে মারিয়া এবং আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। জনাথন, জেসিকা এবং আমি সারাক্ষণ মারিয়ার সঙ্গে এবং একই রুমে বসবাস করছি, কে বলবে যে আমাদের করোনা হয়নি? SOS–কে সব বিষয় জানিয়ে ই-মেইল করতেই তাদের উত্তর কেউ থাইল্যান্ড ছেড়ে যেতে পারবে না যদি আগামীকাল পর্যন্ত প্লেটলেট লো থেকে হাইয়ে না আসে।

ফিরে গেলাম মারিয়ার মেডিকেল জার্নালে। দেখা গেল জ্বরসর্দি হলেই তার প্লাটিলেট বিলো ১০০ হাজারে দেখা গিয়েছে। ডাক্তাররা এখন কিছুটা আশ্বস্ত হতে শুরু করল। নতুন করে রক্ত পরীক্ষা করতে লাগল প্লাটিলেট শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে ৯০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। SOS এবং থাইল্যান্ডের ডাক্তার টিম মিলে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে মারিয়াকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে নানা ধরনের ওষুধ দিয়ে সঙ্গে ১৫০ হাজার বাথ–এর একটি বিল হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।

মারিয়ার হোটেলে ফিরে আসা জীবনে নতুন করে তার দেখা মিলেছে। জনাথন, জেসিকা এবং আমি মারিয়াকে ঘিরে বসে আছি। কে, কীভাবে কী করবে না করবে ব্যস্ত, হোটেলের সবার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে SOS থেকে ই-মেইল এসেছে, যদি প্লেন কর্তৃপক্ষ কোভিডের কারণে প্লেন ভ্রমণ করতে বাধা দেয় তবে যেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে জানাই। যদি মারিয়া কোনো রকম অসুস্থতা অনুভব করে, তবে যেন ফ্লাইট বাতিল করি।

ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছি। সকালে মাইক্রোবাস এসে আমাদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাবে। ঘড়ির কাঁটা বেজে উঠেছে। সবাই সুস্থ, তবে আমার শরীরে জ্বর প্রায় ১০২–এর কাছাকাছি। মারিয়ার আগমনে যতটুকু আনন্দ ফিরে অসেছিল, মুহূর্তের মধ্যে তা ম্লান হয়ে গেল। আমি মনের ওপর বিশ্বাস করে ৫০০ মিলিগ্রামের একটি প্যারাসিটামল খেয়ে সবাইকে রওনা দিতে বললাম। মত–দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসা এবং স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস রেখে মাইক্রোবাসে করে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছি। জ্বর নতুন করে এসেছে, জনাথন ফুকেট থেকে ব্যাংকক আর আমরা ফুকেট থেকে স্টকহোমে পথে রওনা দিয়েছি। কিছুটা সন্দেহজনক ছিল। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো বাধা দিতে পারত। তবে এ মুহূর্তে নতুন কোনোরকম রেস্ট্রিকশন না থাকায় কোভিড চেক করেনি, তবু মুখে মাস্ক পরে ভ্রমণ চলছে। পাইলট সবে বলল, এ মুহূর্তে দুবাইয়ের ওপর দিয়ে প্লেন চলছে। আমি এর মধ্যে প্যারাসিটামল তিনটা খেয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে লিখে চলছি। দুবাই পার হতেই পুরো আকাশ অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে। ভাবনায় ঢুকেছে রাতের পরে দিন হবে। আমাদের এই ভ্রমণে নিশ্চয়ই ভালো–মন্দে ভরা থাকবে। শুধু কি বিরহের কথা দিয়ে লেখা শেষ হবে? প্লেনে বসে প্রথম থেকেই কেন যেন মনে হলো আন্দামান দ্বীপ এবং তার বিউটি নিয়ে আমি অবশ্যই লিখব। দেরি কেন? যে কথা সেই কাজ। আমি ভালো–মন্দ সবই শেয়ার করি। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। শুধু ভালো কিছুর মধ্যে দিয়ে জীবন নয়। আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই ভেবেছি আমাদের ভ্রমণ আনন্দে ভরা হবে। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ট্র্যাজেডি এবং বিরহের কথা লিখতে হবে। আমার শেয়ার ভ্যালুর কনসেপ্ট থেকে যা শিখেছি, তার ওপর ভিত্তি করে ভাবলাম পুরো ঘটনাটি শেয়ার করি।

এই ভ্রমণে অনেক চেনা–অচেনা মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। দেখেছি থাইল্যান্ডের মানুষের হৃদ্যতা, আতিথেয়তা। দেখেছি স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি। হয়েছে নিজ পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা আরও গাঢ়। শিখেছি এবং দেখেছি বিপদে কীভাবে ইউনিটি তৈরি হয়।

পড়েছে অনেক অশ্রু ভালোবাসার কারণে। ইনস্যুরেন্সের গুরুত্ব কত, সে সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা হয়েছে। সতর্কতা বেড়েছে নিজ শরীরের প্রতি। কেন শরীরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সর্বোপরি সাগরের মাঝে মহাসাগরের দেখা। মানে যে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করেছি, তার চেয়ে অনেক সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছি, জেনেছি। তারপর স্রষ্টার রহমতে মহাবিপদে সেই সুদর্শন জার্মান ছেলেটি ফেরেশতার মতো এসে মারিয়ার জীবনের এত বড় বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল! তিনি আবারও প্রমাণ করে দিলেন। তিনি (আল্লাহ রাব্বুল আলামিন) তিনি কী না পারেন।

ভালোবাসা যেমন ধরা বা ছোঁয়া যায় না, তবে তা অনুভব করা যায়। তবে প্রকৃতি যেমন দেখা যায় তেমন অনুভব করা যায়, শুধু অনুভবে হৃদয় অনুভব করে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে। ভ্রমণে আনন্দ ভ্রমণে বিষাদ, কথাটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন এবং বাস্তব জীবনে উপভোগও করেছেন তবু আমাদের এত সুন্দর ভ্রমণটা শুধু কি বিরহের বার্তা বহন করবে?

কিছু কথা কিছু গান,
ভাবিতে চাহে প্রাণ!
কথাগুলো জমা হয়ে রয়ে গেল ভাবনায়,
গানগুলো সুর হয়ে চলে গেল জানালায়।
জন্মের শুরুতে ঝামেলা কী বুঝিনি,
বড় হয়ে গুণীদের কথা মতো চলেছি,
ভাবনার জালে আজ তাই ধরা পড়েছি!