ঈদি
সেবার দেশে গিয়েছি ঈদ করতে। যাওয়ার সময় দুই জোড়া জুতা কিনেছিলাম। এক জোড়া খাঁটি চামড়ার। ভেতরটা তুলার বালিশের মতো নরম। আরেক জোড়া স্পঞ্জের সস্তা জুতা। নিত্য ব্যবহারের জন্য। ঈদের দিন সকাল থেকে ঝুমঝুম বৃষ্টি। ঈদগাহের মাঠ ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে নিকটস্থ মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ পড়ানো হবে। সবাই যেন সেখানেই পড়ে নেয়।
আমি জায়নামাজ বগলদাবা করে ছাতা মাথায় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিলাম। স্পঞ্জের জুতা পরে বের হয়েছি। দুইটা কারণে চামড়ার জুতা পরিনি। প্রথম কারণ, বৃষ্টির পানিতে জুতা নষ্ট হবে। দ্বিতীয় কারণ, চামড়ার জুতা চুরি হওয়ার ভয়। বৃষ্টি না হলেও স্পঞ্জের এই জুতা পরেই বের হতাম।
ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার পর বাইরে বের হয়ে দেখি স্পঞ্জের জুতা জোড়া গায়েব। কেবল আমার জুতাই যে গায়েব তা না, পরিচিত–অপরিচিত আরও জনা সাতেক লোক স্যান্ডেল স্যান্ডেল করছে। সবাই বলছে, তাদের জুতা নতুন জুতা। গতকালকে কেনা। গেটের কাছে বেশ কিছু ভিক্ষুক জটলা পাকিয়ে আছে। তাদের নয়ন ভরা আকুতি।
এক লোক ভিক্ষুকদের উদ্দেশে বলল, ‘এই মিয়ারা, তোমরা এইখানে বইসা আছ, দেখো নাই এত্তগুলা জুতা কে নিতাছে?’ আরেকজন বলল, ‘মনে হয় ওরাই নিছে! ব্যাগের ভেতরে হাত দিলেই পাওয়া যাবে।’ বলতে বলতে সে সত্যিই এক ভিক্ষুকের ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। জুতা পাওয়া গেল না। নাক লম্বা এক লোক হা–হুতাশ করতে করতে অভিযোগ করল, ‘ঈদের দিন সকালে জুতা হারিয়ে জুতার বাড়ি খেলাম ভাই।’
আমারটা সপ্তাহখানেক আগে কেনা। দামে সস্তা হলেও মানে এটা সবার জুতাকে ছাড়িয়ে গেছে। দুবাইয়ের জিনিস (যদিও মেড ইন চায়না) বিমানে করে উড়ে আমার সঙ্গে দেশে এসেছে। একটা বিশেষ ভ্যালু তো অবশ্যই আছে। সবচেয়ে বড় কথা, পছন্দের জিনিস।
বৃষ্টি থেমে গেছে। সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রকৃতিও আজ সকাল সকাল গোসল সেরে ফেলেছে। নরম মিঠা রোদ উঁকি দিচ্ছে মেঘের আড়াল থেকে। মসজিদের বাইরে দেবদারুর পাতাগুলো থেকে টপটপ করে বৃষ্টির জল ঝরে ঝরে পড়ছে। নরম রোদের আলতো আভায় দেবদারুর স্নিগ্ধ পাতাগুলো ঝিকিমিকি করছে। কী অপূর্ব দৃশ্য!
আমি খালি পায়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। আমার তেমন খারাপ লাগছিল না। মনে হচ্ছিল, ঈদের দিনটা কাউকে জুতা ঈদি দিয়ে শুরু হলো।
*লেখক: রমজান আলী, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত