আমার জান্নাতের ফুল
আজও বাসায় ফিরতে একটু বেশিই রাত হলো। প্রতিদিনের মতো মা–ই দরজা খুললেন। বললেন, ‘তোর অফিস তো পাঁচটায় শেষ হয়। এখন তো রাত একটা বাজে। বাইরে এতক্ষণ কী করিস? তোর জন্য তো চিন্তা হয়।’
আমি কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেলাম।
খাবার টেবিলে মা আর আমি মুখোমুখি। মা আমার প্লেটে খানিকটা তরকারি তুলে দিতে দিতে বলতে লাগলেন, ‘দুধ গরম করে রেখেছি, খেয়ে নিস। আমি ঘুমতে গেলাম।’
খানিকটা মৃদু গলায় বলি, ‘তুমি অকারণে এত রাত অবধি জেগে থাকো কেন। ঘুমিয়ে পড়লেই পারতে। আমি তো এখন আর ছোট বাচ্চা না যে এত চিন্তা করতে হবে।’
জবাবে মা শুধু একটি কথাই শোনালেন, ‘বাবার একদিন তুইও সন্তানের বাবা হবি, তখন বুঝবি সন্তানের জন্য মা-বাবার কেমন লাগে?’
কথাটা যে কতটা গুরুত্ব বহন করে, তা ওই দিন উপলব্ধি করতে পারিনি।
মহান আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর হুকুম পালন ও ইবাদত করার জন্য, কিন্তু তা আমি কখনোই সঠিকভাবে করিনি কিংবা করার চেষ্টাও করিনি। আমি জানি, আল্লাহর পাপী, গুনাহগার ও নিকৃষ্ট বান্দা আমি। হয়তো শেষ বিচারে আমাকে নিশ্চিত দোজখে পাঠাবেন, কিন্তু জানি না কী কারণে মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে এক অনাবিল সুখ–শান্তি দান করে এক জান্নাতের ফুলের সৌরভে প্লাবিত করেছেন আমার প্রতিদিন ও প্রতিটা ক্ষণ।
যে ফুলের সৌরভ শত দুঃখ–কষ্ট ও বেদনার মাঝেও আমাকে খুশিতে আচ্ছন্ন রাখে। সারাক্ষণ আমার একমাত্র পুত্র ফারহান আহমেদ আরিয়ানই মহান আল্লাহ প্রদত্ত আমার জান্নাতের ফুল ও আমার প্রাণ। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে আজ আমি পরিবার–পরিজন ও আমার জান্নাতের ফুল এবং আমার প্রাণকে ছেড়ে প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার দূরে প্রবাসে অবস্থান করছি।
দীর্ঘদিন থেকে ফারহান আমার কাছে নেই, তাই আমি জান্নাতের ফুলের সুরভি থেকে বঞ্চিত। যে সুবাসের অভাবে হৃদয়ের গভীরে কষ্টের তিব্রতা অনুভব করি সারাক্ষণ। এক আকাশ দুঃখ–বেদনা ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। ঈদে খুব বেশি মনে পড়ছে আমার প্রাণ জান্নাতের ফুল ফারহানকে। সত্যিই উপলব্ধি করছি মায়ের সেই কথা, একদিন তুইও সন্তানের বাবা হবি, তখন বুঝবি সন্তানের জন্য মা–বাবার কেমন লাগে।
আমি অনুভব করছি বিষণ্ন যন্ত্রণা, মৃত্যুযন্ত্রণা হয়তো এর বেশি হবে না।