হাওরের জীবন, হাওরের সংস্কৃতি যেমন দেখেছি

ছবি: প্রথম আলো

প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে আর কিছুর কি তুলনা হতে পারে? কখনো না। হাওরের প্রকৃতি এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত যে যিনি একবার তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন, তিনি সারা জীবনেও তা আর ভুলতে পারবেন না। আর কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে হাওরপারের মানুষের মন প্রকৃতির মতোই সুন্দর ও সহজ-সরল। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো তো একেবারেই প্রকৃতির সন্তান। তাঁদের মনমানসিকতা শুধু সহজ-সরলই নয়, বরং বলা যায় তাঁদের মন-মানসিকতা একেবারেই কৃত্রিমতাবর্জিত। তাঁদের স্বতন্ত্র জীবনধারাও যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

আমি বর্তমানে শহরের অধিবাসী হলেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় পর্যন্ত শৈশব আর কৈশোরটা হাওরাঞ্চলেই কাটিয়েছি। বলা যায়, হাওরের কাদা-মাটি মেখেই বড় হয়েছি। হাওরপারের একেবারেই সাদামাটা ছোট একটা গ্রামে কাটানো শৈশব আর কৈশোরটা যে কতটা সুন্দর ছিল, তা তখন কিন্তু এতটা বুঝতে পারিনি, যতটা এখন পারি। এখন ফিরে দেখা শৈশব আর কৈশোরটা কেবলই রঙিন মনে হয়। মনে হয় এই পুরো সময়টাই যেন স্বপ্ন দিয়ে মোড়ানো ছিল। আহা রে আবারও যদি ফিরে পেতাম স্বপ্নঘেরা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো! সেই দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, অবারিত সবুজের প্রান্ত ছোঁয়া আকাশ, দূর-বহুদূরে হারিয়ে যাওয়া মেঠো পথ, আঁকাবাঁকা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গুনটানা নৌকা দেখা, ভরা বর্ষায় প্রমত্ত যৌবনা হাওরে ঝোড়ো বাতাস, ঢেউ আর বৃষ্টির মিতালির অপূর্ব দৃশ্য দেখা—সব যেন এখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

এসব মন উদাস করা স্মৃতির সঙ্গে আজ শৈশব-কৈশোরের আমাদের এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মনমাতানো স্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এসব স্মৃতির কথা কি কেউ কোনো দিন ভুলতে পারে! কখনোই না। বরং ভুলতে চাইলেই যেন আরও বেশি করে মনে পড়ে সেসব সোনালি দিনের কথা।

বৈশাখের ফসলটাই হাওরের মানুষের বলতে গেলে আসল সম্বল। আমাদের শৈশবে আমি বহুবার খরায় বৈশাখের সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি। তখন মানুষের কষ্টের কোনো সীমা থাকত না। তবে সব বছরেই যে হাওরের ফসল নষ্ট হয়ে যেত, তা নয়। যে বছর তাঁদের ভালো ফসল হয়েছে, সে বছর কৃষকের আনন্দের আর সীমা থাকত না। বৈশাখের ফসল ঘরে তুলেই তাঁরা শুরু করতেন আনন্দ উদ্‌যাপন। প্রায় প্রতি গ্রামেই পালাগান মঞ্চায়নের আয়োজন শুরু হয়ে যেত। সারা গ্রামের মানুষ দরবার (মিটিং) করে সিদ্ধান্ত নিত কোন পালা মঞ্চায়িত হবে আর এতে কার কী ভূমিকা থাকবে। একজনকে ম্যানেজারের আর একজনকে দলের সেক্রেটারির দায়িত্ব দেওয়া হতো। এ দুইজন মোটামুটি ভালো অঙ্কের চাঁদাও দিতেন। একটা পালাগান মঞ্চায়নের জন্য বেশ খরচের প্রয়োজন হতো। এ দুইজন ছাড়াও গ্রামের সবাই মিলেই এ খরচ বহন করতেন। এ পালা মঞ্চায়নের জন্য সে কী উৎসাহ–উদ্দীপনা! এর জন্য প্রায় মাসাধিক সময় রিহার্সাল হতো। গ্রামের পড়াশোনা না জানা মানুষ। কেউ রাজা, কেউ সেনাপতি, কেউ উজির, কেউ রাজকুমার, কেউ রানি, কেউবা রাজকুমারীর ভূমিকায় অভিনয় করতেন। মেয়ে চরিত্রের ভূমিকায় পুরুষেরাই অভিনয় করতেন। শুদ্ধ বাংলায় ডায়ালগগুলো মুখস্থ করা বা বলা তাঁদের জন্য কত যে কষ্টসাধ্য ছিল, তা বলাই বাহুল্য।

এরপরও দেখা যেত মাস দেড়েক প্রাণান্তকর চেষ্টার ফলে ডায়ালগগুলো মোটামুটি ভালোভাবেই তাঁরা মুখস্থ করে ফেলতেন। অবশেষে শুরু হতো মঞ্চায়নের চূড়ান্ত আয়োজন। গ্রামে তো নাট্যমঞ্চ ছিল না। বিভিন্ন বাড়ি থেকে ছয় থেকে আটটি চৌকিখাট এনে মঞ্চ প্রস্তুত করা হতো। মঞ্চের ওপর টাঙানো হতো শামিয়ানা। হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা করা হতো। সবকিছু মিলে ছিল এক এলাহি কাণ্ড। যাঁরা রাতে রাজা বা সেনাপতির অভিনয় করবেন, তাঁদেরই দেখা যেত দিনের বেলায় এগুলো কাঁধে করে জোগাড় করছেন। পালাগান মঞ্চায়নের কয়েক দিন আগে থেকেই বেশ কয়েকটা গ্রামের মানুষের মধ্যেই এটা উপভোগ করার জন্য টানটান উত্তেজনা বিরাজ করত। অবশেষে এক রাতে আসত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রথমে শুরু হতো হারমোনিয়াম, তবলা, বাঁশি, ঢোলক, সানাই ইত্যাদির সম্মিলিত যন্ত্রসংগীত। মানুষের মনে তখন সে কী শিহরণ! এরই মধ্যে হঠাৎ করেই যন্ত্রসংগীতের সুরটা পরিবর্তিত হয়ে যেত। সবাই বুঝে যেত বন্দনা শুরু হয়ে যাবে। সবাই তখন একেবারেই নিশ্চুপ। এমন সময় মঞ্চে উঠে আসত একদল শিল্পী। শুরু হতো বন্দনা। তখনই চূড়ান্তভাবে আসর জমে যেত। বন্দনার পরই শুরু হতো মূল পালাগান। জমজমাট এক রাত্রি। মানুষ একেবারেই নড়াচড়া করতেন না। এমনকি প্রস্রাবের চাপ হলেও না। প্রস্রাব আটকিয়েই সারা সময়টা কাটিয়ে দিতে হতো। যাহোক, পালাগান চলাকালে অনেক সময়ই ঘটত মজার মজার সব ঘটনা। এমন একটা ঘটনা বলি। পালাগানের একপর্যায়ে দুই সেনাপতির মধ্যে শুরু হলো যুদ্ধ। এই দুই অভিনেতার মধ্যে একজন বয়সে বড়। বাস্তবে তাঁরা সম্পর্কেও মামা-ভাগনে। পালাগানের কাহিনি অনুযায়ী বয়সে যিনি বড়ে তাঁরই যুদ্ধে হারার কথা। কিন্তু তিনি হারতে রাজি নন। তিনি এটাকে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নিয়ে ফেললেন। যুদ্ধের সময় বাজনাও বাজাতে হয় জোরে জোরে। বাদক দলও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকেই ভাগনে মামাকে অনুরোধও করলেন পরাজয় মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু মামা পরাজিত হতে নারাজ। অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে শক্তিশালী ভাগনে বেশি বয়সী আর কিছুটা দুর্বল মামাকে একরকম বল প্রয়োগ করে পরাজিত করে জোর করেই নিয়ে ড্রেসিং রুমে চলে গেলেন। ভাগনের প্রত্যুৎপন্নমতিতে এই শ্বাসরুদ্ধকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে আয়োজকরা বেঁচে গেলেন। পালার বাকিটারও সুন্দর পরিসমাপ্তি হলো। সাধারণ পড়াশোনা না জানা মানুষেরও যে উপস্থিত বুদ্ধি থাকতে পারে, এর প্রমাণ এ ঘটনা।

পালাগানের পাশাপাশি চিত্তবিনোদনের আর একটা বিষয় ছিল নাটক মঞ্চস্থ করা। নাটক সাধারণত মঞ্চস্থ হতো শীতকালে কোনো ক্লাব বা এলাকার ছাত্রদের অথবা ছাত্র ও বয়স্কদের সম্মিলিত উদ্যোগে। মোটামুটি শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ থাকত এতে। নাটকের নারী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে নারী শিল্পী নিয়ে আসা হতো। এসব নাটকও খুব উপভোগ্য হতো। তবে রিহার্সাল থেকে শুরু করে মঞ্চস্থ করা পর্যন্ত বিষয়টা একেবারে সহজ কাজ ছিল না। আমাদের এলাকার কয়েক গ্রামের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা ‘চেনা কণ্ঠ’ নামের একটা ক্লাব গঠন করেছিলাম। এ ক্লবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম আমি। তখন আমরা ক্লাবের উদ্যোগে একাধিক নাটক মঞ্চস্থ করেছিলাম। তখন দেখেছি বিষয়টা কতটা ঝামেলার। একদিকে টাকাপয়সা জোগাড় করা, অন্যদিকে মঞ্চ বানানো, লাইটের ব্যবস্থা করা, অতিথিদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি করার সময় প্রতিবারই আমরা বলতাম যে আমরা আর নাটক করব না। কিন্তু পরের বছর আবার আমরা নাটক করতাম। আমাদের নাটকগুলো ভালোই হতো। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর এলাকায় অনেক দিন পর্যন্ত ক্লাবের প্রশংসাসূচক আলোচনা চলত। তখন আমাদের মনটা আনন্দে ভরে উঠত।

যাত্রাগান হাওরাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। সাধারণত শীতের সময় যাত্রা পালা মঞ্চায়িত হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রা দল আনা হতো। এলাকায় আগেই খবর ছড়িয়ে পড়ত যে যাত্রা দল আসছে। প্যান্ডেলের কাজ শুরু হতো। আর তখন মানুষের মধ্যে সে কী আগ্রহ! যাত্রা দল কোথা থেকে আসবে? কী কী পালা হবে? দলে ভালো অভিনেতা বা অভিনেত্রী আছে তো? এসব প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। আর আয়োজকদের সে কী ব্যস্ততা আর কত ভাব! তাঁদের মুখ থেকে কথা বের করাই ছিল কঠিন। তাঁরা তখন এক একজন ভিআইপি। অবশ্য তাঁদের কষ্টেরও কোনো শেষ ছিল না। যাহোক, অবশেষে সব আয়োজন শেষ হলে যাত্রা দল আসত। শুরু হতো পালা। এক এক দিন এক এক পালা। যেমন ‘একটি পয়সা’, ‘আঁধারের মুসাফির’, ‘এই পৃথিবী টাকার গোলাম’, ‘এক মুঠো অন্ন চাই’, ‘মায়ের চোখে জল’, ‘মা-মাটি-মানুষ’, ‘দেবী সুলতানা’, ‘মোঘল-এ আজম’, ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’, ‘বর্গী এলো দেশে’, ‘রক্তস্নাত ৭১’, ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ ইত্যাদি দারুণ সুন্দর সুন্দর সব পালা। অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের অভিনয়ও ছিল চমৎকার। যাত্রা দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দিপালী অপেরা, বুলবুল অপেরা, গণেশ অপেরা, নবরঞ্জন অপেরা, বাসন্তী অপেরা, বাবুল অপেরা, বলাকা অপেরা, চারণিক নাট্যগোষ্ঠী, ফাল্গুনী অপেরা ইত্যাদি। অভিনেতা বা অভিনেত্রীর মধ্যে ছিলেন নয়ন দত্ত, অমলেন্দু বিশ্বাস, আলিম, মুসলিম, নয়ন মিয়া, আশরাফ আলী, মঞ্জুশ্রী, জ্যোৎস্না বিশ্বাস, রিনা সুলতানা, চন্দ্রা ব্যানার্জী, শবরী দাশ গুপ্তা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। আমি নিজেও অনেক যাত্রা পালা দেখেছি। কী সুন্দর পালা আর কী অপূর্ব অভিনয়! সব দর্শক একেবারে বিমোহিত হয়ে যেতেন। পালার সুখ-দুঃখের কাহিনির সঙ্গে একাত্ম হয়ে হাসিতে ফেটে পড়তেন অথবা কান্নায় সবার চোখ ভিজে যেত। সত্যি খুব মজার ছিল সেই সব আবেগমাখা দৃশ্যগুলো।

বাউল সুকুমার বৈরাগী
ছবি সংগৃহীত।

চিত্তবিনোদনে বাউলগান

শুধু পালাগান নাটক আর যাত্রাপালা নয়, হাওরের মানুষের চিত্তবিনোদনের আর একটা বিষয় ছিল বাউলগান। একসময়ের প্রতাপশালী জমিদার অহিদুর রেজা বা দেওয়ান হাছন রাজা চৌধুরী বাংলাদেশের একজন মরমি কবি এবং বিখ্যাত বাউলশিল্পী ছিলেন। তিনি হাছন রাজা নামেই সারা দেশে পরিচিত। সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে এই মরমিয়া কবির জন্ম। তিনি সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর রচিত গানগুলো শুনলে মনের মাঝে আধ্যাত্মবোধের জন্ম হয়। তাঁর গান শুধু হাওর অঞ্চলের নয়, বরং সারা দেশের মানুষের কাছে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আগেকার দিনে প্রতিবছর বোরো ধান ঘরে তোলার পর প্রতি গ্রামেই বাউলগানের আসর বসত। আসরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ আসত গান উপভোগ করার জন্য। এক আসরে কমপক্ষে দুইজন শিল্পী থাকতেন। তাঁরা একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে প্রতিযোগিতা করতেন। এক একজন এক একটা বিষয় বেছে নিতেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে একে অপরকে প্রশ্ন করতেন। জমজমাট হতো এসব আসর। গান আর প্রশ্নবাণের মায়াবী জালে দর্শক-শ্রোতাদের একেবারে সম্মোহিত করে ফেলতেন। এমন হতো যে একনাগাড়ে সারা দিন আর সারা রাত ধরে চলত এই গান। আর যতক্ষণ পর্যন্তই গান চলত না কেন মানুষের আগ্রহ–উদ্দীপনার কোনো কমতি ছিল না। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাউলশিল্পী জালাল উদ্দিন খাঁ ছিলেন অসাধারণ বাউলশিল্পী। বাংলাদেশের অনেক নামকরা শিল্পী তাঁর লেখা গান গেয়ে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বাউলশিল্পী উকিল মুন্সি গান গেয়ে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সিনেমা নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সিনেমায় তাঁর গানগুলো স্থান পাওয়ার ফলে এগুলো এখন সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর অসংখ্য গানের মধ্যে ‘শোয়াচান পাখি আমার শোয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে’, ‘সোনা বন্ধুয়া রে এত দুঃখ দিলে তুই আমারে’ উল্লেখযোগ্য। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম বাউলগানকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রভাত সূত্রধরও অসাধারণ গান গাইতেন। আমাদের এলাকায় ছোটবেলায় আমি যাঁদের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি, তাঁদের মধ্যে বাউল আবেদ আলী, শুনীল, সিরাজ উদ্দিন, আবদুল মজিদ তালুকদার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। নেত্রকোনার অন্যান্য বাউলশিল্পীরা হলেন ইসলাম উদ্দিন, রশিদ উদ্দিন, ইদ্রিস মিয়া, আবু হোসেন সরকার, চান খাঁ, ফকির চান, ইদ্রিস মিয়া প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এই গুণী শিল্পীরা হাওরাঞ্চলের মানুষকে কত যে আনন্দ দিয়েছেন, তা বলে শেষ করা যাবে না।

বাউলগানের পাশাপাশি পালা বা লম্বা কিচ্ছাগানও হাওরাঞ্চলের মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিল। ছোটবেলায় আমাদের এলাকার আবদুল কদ্দুছ বয়াতির গান অনেকবার শুনেছি। এখন তো তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কিচ্ছাগানকে তাঁর দক্ষতা আর যোগ্যতা দিয়ে অসাধারণ এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। তিনি ছাড়াও আরও কয়েকজন বয়াতিকে খুব চমৎকারভাবে এই কিচ্ছা গাইতে দেখেছি। খুব ভালো লাগত তাঁদের পরিবেশনা।

বোরো ধান তোলার পরই শুরু ফুটবল খেলা

বোরো ধান তোলার পরই ফুটবল খেলার ধুম পড়ে যেত। আমরা ছোটবেলায় জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে খুব খেলতাম। অনেক খড়কে গোলাকৃতি করে বেঁধে ফুটবল বানিয়েও খেলতাম। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের স্কুলের বাইরে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। স্কুলেই পড়া ভালোভাবে বুঝে ফেলতাম। ফলে বন্ধের দিন ছাড়াও স্কুলের পরে প্রতি বিকেলেই খেলাধুলার জন্য অনেক সময় পেতাম। কি রৌদ্রে, কি বৃষ্টিতে আমাদের বিরামহীন খেলা চলতই। এ ছাড়াও অনেক গ্রামেরই বেশ বড় বড় মাঠ ছিল, যেগুলোতে নিয়মিত জমজমাট ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। প্রতি গ্রামের দলই এসব টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করত। তবে ফুটবল টুর্নামেন্টের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটিটাও মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। হারটাকে কোনো দলই খুব সহজভাবে মেনে নিতে চাইত না। বিশেষ করে বড় গ্রামগুলো একরকম গায়ের জোরেই জিততে চাইত। এরপরও তখন টুর্নামেন্টগুলো শেষ হতে পারত। হাজার হাজার দর্শক এসব খেলা দেখতে ভিড় জমাতেন। এসব টুর্নামেন্টের কল্যাণে বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড়ও তৈরি হতো, যাঁদের দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়ানৈপুণ্যে আমরা বিমোহিত হতাম।
শীতকালে ভলিবল খেলাটাও খুব আনন্দময় ছিল। বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে ভলিবল টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করা হতো। এতে করে কিছু কিছু ভালো খেলোয়াড় যেমন তৈরি হতেন, সাধারণ মানুষ তেমন খেলাটা উপভোগেরও সুযোগ পেতেন।
হাওর অঞ্চলে ষাঁড়ের লড়াই ছিল আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় প্রতি গ্রামেই এক বা একাধিক বড় ষাঁড় থাকত, যেগুলোকে শুধু লড়াইয়ের জন্যই রাখা হতো। হাজারো মানুষ ষাঁড়ের লড়াই উপভোগ করতেন। আমাদের এলাকায় এই যে ষাঁড়ের লড়াইয়ের মেলা, এটাকে ‘আরাং’ বলা হতো। আরাংয়ে অনেক ষাঁড়ের আগমন ঘটত। তবে সবচেয়ে বড় ষাঁড়ের লড়াইটা হতো সবার শেষে। যে দুই গ্রামের ষাঁড়ের মধ্যে লড়াইটা হতো, সেই দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরাজ করত টানটান উত্তেজনা। দুই পক্ষের মানুষেরাই এটাকে প্রেস্টিজ ইস্যু মনে করতেন। এ উত্তেজনার ফলে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটিও হয়ে যেত।

ভরা বর্ষায় নৌকাবাইচ ছিল আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন গ্রাম তাদের নৌকা নিয়ে বাইচে অংশগ্রহণ করত। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। অনেক লম্বা নৌকায় একজন হাল ধরতেন আর অন্যরা বৈঠা বাইতেন। হালের বৈঠাটা থাকত অনেক লম্বা। আমাদের গ্রামের বাড়িতে আমার দাদার আমলের ষোলো হাত লম্বা একটা বৈঠা এখনো আছে। আসলে এটা ছিল আঠারো হাত লম্বা। দুই হাত ভেঙে যাওয়ায় এটা এখন ষোলো হাত লম্বা আছে। বৈঠাটা এতটাই ভারী যে আমার একার পক্ষে এটাকে ওঠানোই কঠিন। আমি আশ্চর্য হই যে কোনো একজন এটা দিয়েই শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকাটা সামলাতেন। যাহোক, প্রতিটি নৌকায় বাদ্যযন্ত্র থাকত। এই বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে সবাই সুর করে গান ধরতেন আর সর্বশক্তি দিয়ে বৈঠা চালাতেন। হাওরের এই প্রতিযোগিতা দেখার জন্য ছোট ছোট নৌকা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতেন এবং আনন্দ পেতেন।

হাওরের বিয়ে অনুষ্ঠান অনেক মজার

হাওর অঞ্চলের বিয়ে অনুষ্ঠানকে ঘিরে অনেক মজার মজার বিষয় হতো। বিয়ের কয়েক দিন আগ থেকেই বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যেত। বিয়ের আয়োজনে প্রতিবেশী নারীরা সর্বোতভাবেই সহযোগিতা করতেন। পাশাপাশি তাঁরা সবাই মিলে গীত (একধরনের গান) গাইতেন। এই গীতগুলো ছিল একেবারেই সহজ–সরল। কোনো বাজনা আর রিহার্সাল ছাড়াই তাঁরা এগুলো গাইতেন। তাঁরা এভাবেই তাঁদের আবেগ সুরের মাধ্যমে প্রকাশ করতেন, বিয়েবাড়িটাকে মাতিয়ে রাখতেন এবং নিজেরাও মানসিক তৃপ্তি পেতেন। এর জন্য তাঁদের পেছনে তেমন কোনো খরচ করতে হতো না। শুধু পান–সুপারি খাওয়ালেই হতো।

বর্তমান সময়ের মতো তখন এমন ডেকোরেশনের ব্যবস্থা ছিল না। দু-চারটে কলাগাছ কেটে সেগুলোকে বিয়েবাড়িতে ঢুকবার রাস্তার দুই পাশে পিলারের মতো পুঁতে দেওয়া হতো। দুই পাশের কলাগাছগুলোর সঙ্গে বাঁশের ছটি বেঁধে গেট বানানো হতো। কলাগাছগুলোকে রঙিন কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হতো। আর ওপরে অর্ধচন্দ্রাকারে বাঁধা ছটিগুলোতে রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো সুন্দর সুন্দর ফুল লাগিয়ে দেওয়া হতো। তাতেই সুন্দর গেট হয়ে যেত। এখানেই একটা টেবিল আর কিছু চেয়ার সাজিয়ে বরকে অভ্যর্থনা জানানো হতো। বরকে শরবত খাইয়ে মালা পরিয়ে কিছু টাকাপয়সাও আদায় করা হতো। এখানে বর ও কনেপক্ষের লোকদের মধ্যে কিছু সরল–সহজ ছড়া ও শ্লোক বিনিময় হতো। কনের ছোট বোনের বলা একটা ছড়া এখানে উল্লেখ করি। ‘আসেন তো দুলাভাই, বসেন তো চেয়ারে/আমার আপা খুব ভালো পাবেন ভালোবাসারে।’

বিয়েতে থাকত লাঠি খেলারও ব্যবস্থা

বরপক্ষ কলের গান আর মাইক নিয়ে আসতেন। সারা দিন মাইকে গান বাজত। পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া বা বাংলা সিনেমার সব মজার মজার গান। এসব শুনে কত মজাই না পেতেন সবাই। অনেক বিয়েতে লাঠি খেলারও ব্যবস্থা করা হতো। লাঠি খেলায় দলের লোকেরা সুন্দর করে একে অপরের সঙ্গে লাঠির কসরত দেখাতেন। এতে সবাই মুগ্ধ হতেন। যাহোক, বরের সঙ্গে যত লোক আসতেন, সবাই কনেপক্ষের বাড়িতে এক রাত থাকতেন। পরদিন বউ নিয়ে বরপক্ষ বাড়ি যেতেন। সঙ্গে কনেপক্ষের লোকেরাও যেতেন। তাঁরাও বরপক্ষের বাড়িতে এক দিন থাকতেন। হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ বিয়ে বর্ষাকালেই হতো। বরের বাড়ির ঘাটে নৌকা ভেড়ানোর পর বরের বাড়ির নারীরা ধান-দূর্বা দিয়ে কনে বা বউকে বরণ করে নিতেন। এরপর তাকে কোলে করে বাড়িতে নেওয়া হতো। বউকে বিছানার ওপর বসানো হতো। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও বউকে সারা দিন ঘোমটা মাথায় বসে থাকতে হতো। নারীরা, এমনকি পুরুষেরাও দল বেঁধে বউ দেখতে আসতেন। কেউ বউ দেখতে এলে বউয়ের মুখ থেকে ঘোমটাটা একটু সরিয়ে তার মুখটা তুলে দেখানো হতো। বউকে চোখ বন্ধ করে থাকতে হতো। মুখটা দেখিয়ে আবারও ঘোমটা পরিয়ে দেওয়া হতো। এই কাজটা সারা দিন ভরেই চলতে থাকত। কত আর চোখ বন্ধ করে থাকা যায়। হঠাৎ কাউকে মুখটা দেখানোর সময় চোখ একটু খুলে ফেললেই আর রক্ষা থাকত না। বলাবলি শুরু হয়ে যেত যে বউয়ের লজ্জা–শরম বলতে কিছু নেই। আবার ধরেন, বউ একটু অসুন্দর বা বউয়ের নাকটা তেমন খাড়া না। তখন সবাই বিশেষ করে নারীরা বউয়ের সামনেই তাঁর সমালোচনা শুরু করতেন। দেখা যেত, যিনি নিজেই একেবারেই অসুন্দর বা যাঁর নাক বোঁচা তিনিই সমালোচনা করতেন সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বরের জন্য কনের বাড়ি থেকে যে উপহারসামগ্রী (অনেক ক্ষেত্রেই যৌতুক) দেওয়া হতো, এগুলোর ত্রুটি–বিচ্যুতি নিয়েও বউয়ের অনেক কথা শুনতে হতো। এককথায়, প্রথম কিছুদিন নতুন বউকে অনেক লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো। তাঁর কিছুই করার ছিল না। তাঁর তখন কথা বলতেই বারণ ছিল। এমনকি তাঁর পক্ষে অন্য কারও কোনো কথা বলার অবস্থাও থাকত না। বউ বেচারির তখন অসহায়ের মতো সব সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

যাহোক, বিয়ের পরের দিন বরের বাড়ির উঠানে বর আর কনে/বউকে একসঙ্গে বসিয়ে গোসল করানো হতো। গোসল করার স্থানটাকে অবশ্য কোনো কিছু দিয়ে ঘেরাওয়ের ব্যবস্থা করা হতো। বর–কনের গোসলের পরে শুরু হতো কাদা–ছোড়াছুড়ি খেলা। এটা অন্য কিছু নয়। যে যেমন পারতেন একে অপরের গায়ে কাদা মাখাতেন। কেউ এর হাত থেকে রক্ষা পেতেন না। এতে বয়স্ক লোকেরা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তেন।

হাওরাঞ্চলে জৈষ্ঠ্য মাসে কুস্তি খেলা হতো। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শক্তিশালী মানুষদের শারীরিক এ প্রতিযোগিতাও বেশ জমজমাট ছিল। খেলাধুলার মধ্যে হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধা, ডাঙ্গুলি আর ছোটদের বউছি ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবসর কাটানোর জন্য লুডু, বাঘবন্দি আর তাসখেলারও ব্যাপক প্রচলন ছিল। এ ছাড়া ছোটবেলায় বায়স্কোপ দেখেও আমরা খুব আনন্দ পেতাম।

হাওরাঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের অন্তরকে কতটা উদ্বেলিত করত, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার কথাই বলি। শৈশব বা কৈশোরে আমি যখন পালাগান, নাটক বা যাত্রাপালা দেখতাম, তখন ভালো ভালো অভিনেতাদের অভিনয় দেখে মনে মনে বলতাম, ‘আহা রে, আমি যদি এমন একজন অভিনেতা হতে পারতাম!’ আবার নৌকাবাইচের প্রচণ্ড গতির মধ্যে মাল্লাদের উৎসাহিত করার জন্য নৌকার সামনের গলুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে আমারও তাঁর মতো হওয়ার ইচ্ছা করত। আবার বড় বড় দুটো ষাঁড়ের মধ্যে ভয়ংকর লড়াই চলাকালে প্রতিটি ষাঁড়ের রাখাল কোনো ধরনের ভয় না পেয়ে ষাঁড়ের একেবারে কাছে থেকে নিজের ষাঁড়কে যখন উৎসাহিত করত, তখন মনে হতো, ‘এমন সাহসী আমি কেন হতে পারি না?’ আর যখন ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের অসাধারণ ফুটবল–নৈপুণ্য দেখতাম তখন মনে মনে ভাবতাম, ‘আমি যদি এমন একজন ফুটবলার হতে পারতাম!’ এমন কত কিছু দেখে কতবার যে অভিভূত হয়েছি, তার কোনো শেষ নেই।

হাওরাঞ্চলের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একটা মাত্র লেখার মাধ্যমে শত শত বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যমণ্ডিত এই সংস্কৃতির বর্ণনা দেওয়া কঠিন। আর আমার মতো সাধারণ মানুষের তো অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। মনে মনে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় যে লেখাটা আদৌ প্রকাশ হবে কি না। আর লেখাটা বেশি বড় হলে তো আরও ভয় থাকে যে পুরোটা প্রকাশ হবে নাকি কাটছাঁট হয়ে প্রকাশিত হবে। কিন্তু এত বড় একটা বিষয় নিয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হওয়া দরকার। হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনধারা আর তাঁদের সংস্কৃতি নিয়ে, তাঁদের সমস্যা ও সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণা হওয়া দরকার। সময় ও সুযোগ পেলে আমার এ বিষয়ে আরও লেখার ইচ্ছা রইল।

আশার কথা হলো, হাওরের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও গবেষণার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বর্তমান চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসানের প্রচেষ্টায় মোহনগঞ্জের কংশ নদের তীরবর্তী বাহাম গ্রামে ‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ ও একই উপজেলার জৈনপুর গ্রামে ‘উকিল মুন্সি স্মৃতি কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে।

‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রকল্পের জন্য ২ দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২.১১.২০১৮) এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটার বাস্তবায়ন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে রবীন্দ্রসংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মৃতি, রবীন্দ্রসংগীতচর্চা ও গবেষণার যেমন সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি হাওরাঞ্চলের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করার দুয়ারও খুলে যাবে। আর উকিল মুন্সির স্মৃতিরক্ষা এবং সমাধিস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও এগিয়ে চলেছে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। এ দুটো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভাটি বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার সুযোগ-সুবিধা যে বেড়ে যাবে, এমনটা জোর দিয়েই বলা যায়। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়’ ও হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আর এটা করতে পারলে হাওর অঞ্চলের মানুষেরই যে শুধু উপকার হবে তা–ই নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ভান্ডারও সমৃদ্ধ হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাই এ কাজে এগিয়ে আসবেন—এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

* লেখক: মো. মোতাহার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।