সাতক্ষীরা উপকূলের খবর কেউ কি রাখে

বাঁধ ভেঙে ঢুকেছে পানি
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ২০ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলে আঘাত হানে। এর এক বছর পূর্তি হলো। বঙ্গোপসাগর প্রায় প্রতিবছরই কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়, যার সব কটিই আমাদের উপকূলে প্রবল বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে না এলেও সম্প্রতি উপর্যুপরি ঘূর্ণিঝড় ফণী, বুলবুল, আম্পান যে উপকূলের মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর উল্লেখযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুপার সাইক্লোন আম্পান দক্ষিণ–পশ্চিম উপকূলকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এরপর নতুন খবর হলো, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে মে মাসের শেষ দিকে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, খুলনার কয়রা, দাকোপসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রায়ই জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। এর মধ্যে আশাশুনির প্রতাপনগরের বেড়িবাঁধ আম্পানের পর থেকেই অরক্ষিত অবস্থায় ছিল ছয় মাসেরও বেশি সময়। এ অবস্থায় সেখানকার মানুষের জনজীবনে চরম দুর্দশা নেমে আসে। উল্লেখ্য, অনেক বয়োজ্যেষ্ঠর ভাষ্যমতে, আম্পান–পরবর্তী জলোচ্ছ্বাসের মতো পানি সারা জীবনেও তাঁরা দেখেননি।

ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভাঙার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উপকূলীয় বাঁধগুলোর নকশা ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সালের। সমতল থেকে বাঁধগুলোর উচ্চতা ১০ ফুট। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আইলা বা আম্পানের সময় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল। ক্ষেত্রবিশেষ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা এর থেকেও বেশি থাকে। এ কারণে বাঁধগুলো শতভাগ পানি আটকাতে পারছে না। এ ছাড়া চিংড়িঘেরে পানি প্রবেশ করাতে গিয়ে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে অভাবে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পানিতে প্লাবিত এলাকা
ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, নির্বাচনের সময় স্থানীয় নেতারা বাঁধের প্রতিশ্রুতি দেন, অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা বরাদ্দ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ তৈরি করে। ঠিকাদার সবাইকে খুশি করে তাঁর প্রাপ্য বুঝে নেন। তারপর দেখা যায় বাঁধ আর নেই। প্রমত্ত নদীর আঘাতে তা তলিয়ে গেছে। এত কিছুর পরও উপকূলবাসী প্রতিটি দুর্যোগের পরে আবার উঠে দাঁড়ায়, আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। দুর্যোগপরবর্তী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে সার্ভে হবে, গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়, তবে এসব গবেষণাপত্র দিয়ে অনেকের অনেক স্বার্থ হাসিল হলেও উপকূলবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে না, এ যেন নির্মম সত্য।

উপকূলবাসীর নিত্যদিনের জীবন
ছবি: সংগৃহীত

বস্তুত, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার এ বেহাল দশার দায় কেউই এড়াতে পারে না। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী উপকূলীয় এলাকার মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদ কি দেবালয়ে পৌঁছায়? নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?
সবকিছু দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। আসছে ঘূর্ণিঝড়ের আগে উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার করা হোক। ত্রাণ নয়, উপকূল রক্ষায় টেকসই বাঁধ চাই।

*লেখক: খালিদ সোহরাওয়ার্দী, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ