বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কেন

আজকের ছাত্রসমাজ আগামীর দেশ গড়ার কারিগর। বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি দেশের উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। একটি দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্তচিন্তা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পীঠস্থান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর ভর্তিযুদ্ধে নির্দিষ্টসংখ্যক আসনসংখ্যার বিপরীতে লাখো শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পেছনে তাঁর স্বপ্ন, একটি পরিবারের স্বপ্ন এবং একটি দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা জড়িত থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সমাজ একটু অন্য চোখে দেখে। তাঁদের সবাই সম্মান করে। তাঁদের ওপর সবার ইতিবাচক আশা, তাঁরাই আগামীর সোনার বাংলা গড়ার কারিগর।

কিন্তু পরম দুঃখ ও হতাশার বিষয় হলো, যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমর্থনে পুলিশ বাহিনীর বর্বর হামলার শিকার হন, তাঁদের সম্ভাবনাময় মগজ ও বুকে বুলেট চালানো হয়।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল, হলের প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টদের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। ছাত্রীদের দাবি ছিল, হলের ভেতরে তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয় না। খাবারের মানও নিম্নমানের। তা ছাড়া নানাভাবে ছাত্রীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। আর এসব করেন প্রভোস্ট নিজেই।

এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ছাত্রীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।‌ শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল, বর্তমান প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, ছাত্রীবান্ধব নতুন প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ এবং হলের সব অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া মানতে কালক্ষেপণ করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই করা হয় এবং প্রক্টরিয়াল বডি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রশ্ন হলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমন-নিপীড়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেন ছাত্রলীগকে ব্যবহার করতে হয়? ছাত্রলীগের আদর্শ তো এমন ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে, অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগ সংহতি প্রকাশ করবে, এটাই তো ছাত্রলীগের আদর্শ।

সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত শুক্রবারের বৈঠকের পর হল প্রাধ্যক্ষকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মূল সমস্যাকে আড়াল করে রাখা হলো, অর্থাৎ প্রভোস্টকে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে পাঠিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ করা হলো। দুই দিন পর ব্যক্তিগত কারণ দর্শিয়ে সে প্রভোস্ট তো ঠিকই পদত্যাগ করলেনই! তাহলে কেন ছাত্রলীগ ও পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হলো? আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়েছেন, তাই বলে সাউন্ড গ্রেনেড কিংবা শটগানের মতো অস্ত্র কেন তাঁদের ওপর প্রয়োগ হবে? ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলিতে শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রথমেই সহজভাবে মেনে নিত, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না।‌ তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা পরিস্থিতিতে ভয়াবহতার দিকে নিয়ে গিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় প্রশাসন দিয়ে শিক্ষার্থী পেটানোর এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

লেখক: ইমরান ইমন, শিক্ষার্থী