বস, স্যার শিক্ষক

শিক্ষক
প্রতীকী ছবি

করোনার কোপে বা প্রকোপে যা–ই বলি না কেন, কয়েকজন পেশাজীবী উঠেছেন এক ডেরায়; বলতে গেলে পেটের দায়েই; দুই রুমের কামরায় জনা পাঁচেক; মাঝে মধ্যেই বেড়ে যায়; বাড়িওয়ালির তোপের মুখে দু–একজন সটকে পড়েন; মান–সম্মান গেলেও একেবারে ইজ্জত তো বিকিয়ে দিতে পারেন না! এঁরা সবাই মাস্টার মশাই! একটা অ/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ান! এঁরা সৌভাগ্যবান; সিলেটের বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের মতো হোটেলে ওয়েটারের কাজ করতে হয়নি; অথবা এঁরা এটা পেরে উঠবেন না! তবে নিজেদের মধ্যে সম্বোধনে ‘বস’ শব্দটি ব্যবহার করছেন!

বিভিন্ন বয়সের, নানা কিসেমের; সিনিয়র–জুনিয়র ধারায়; একসঙ্গে থাকার কারণে যৌথ কিছুর প্রয়োজন দেখা দেয়; একে অপরকে সম্বোধনও করতে হয়; কর্মক্ষেত্রে হয়তো অমুক স্যার, তমুক স্যার, হেড স্যার, সেকেন্ড স্যার বিভিন্ন অভিধা যুক্ত হয়; তবে ইদানীং মাস্টারদের মধ্যে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—বস বলে সম্বোধন; শুনতে মনে হয় শ্রবণকারীর মন্দ ঠেকে না; বরং গাম্ভীর্যই বাড়ে! বপু প্রসারিত করে; বস করপোরেট কালচারে ব্যবহৃত শব্দ; শিক্ষকদের ভেতর এই কালচার এখনো রপ্ত হয়নি; কোনো স্তরেই—তা সে হায়ার থেকে লোয়ার পর্যন্ত; ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি পর্যায়ের; আরেকটি বহুল ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দ ‘স্যার’। এটা অবশ্য সর্বত্রই চলে—অফিস, আদালত থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; কিন্তু ‘স্যার’ আর ‘শিক্ষক’ শব্দের ভেতর ঢের পার্থক্য; ছোটবেলায় পড়া ঠিক ক্ষার আর ক্ষারকের পার্থক্যের মতো; সব ক্ষারকই ক্ষার কিন্তু সব ক্ষারই ক্ষারক নয় জাতীয়; সব শিক্ষকই স্যার হতে পারেন কিন্তু সব স্যারই শিক্ষক নন; হতে পারেন না; শিক্ষক হওয়া যথেষ্ট সাধনার বলেই আমার ধারণা; এমনকি যাঁরা সরাসরি পাঠদানে জড়িত, তাঁদের ক্ষেত্রেও; সরাসরি তাঁদের শিক্ষার্থীদের কাছেও; গভীর এক দ্যোতনা জড়িয়ে আছে শিক্ষকতা পেশায়; এই পেশায় আসতে হলে খুব মেধাবী হতে হবে; আবার কেবল মেধাবী হলেই হবে না, হতে হবে অতি মানবিক; সেটিও একজন শিক্ষককে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক করবে না; তাঁকে হতে হবে সঠিক সূক্ষ্ম বিচারসম্পন্ন, যাতে কোনো শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার না হয়। এই সমাজে বিভিন্ন কারণেই শিক্ষক শ্রেণির বিলুপ্তি ঘটছে; তৈরি হচ্ছে ‘বস’ শ্রেণি; নিদেনপক্ষে সাহেব গোত্রের ‘স্যার’ শ্রেণির!

*লেখক: জিল্লুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, ইংরেজি বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ