নৌপথ নিরাপদ হবে কবে

উদ্ধার করার পর ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিত আল হাসান
ফাইল ছবি

নদীমাতৃক এ দেশের বুকের ওপর দিয়ে বহমান শত শত নদী। নদীকে ঘিরেই অনেক মানুষের জীবনজীবিকা। যাতায়াত, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে নদীকে ঘিরে। নদী দিয়েছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ উপাধি। এ ছাড়া এ দেশে অনেক মানুষের যাতায়াতের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম নৌপথ। তুলনামূলকভাবে খরচ কম এবং আরামদায়ক হওয়ায় অনেক মানুষই যাতায়াতের জন্য নৌপথকে বেছে নেয়। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কমবেশি নৌপথে যাতায়াত করে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের গণপরিবহন বলতে নৌযানকেই বোঝায়। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও আমাদের দেশের নৌপথ কতটুকু নিরাপদ? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে একদমই ভাবতে হয় না। কিছুদিন পরপরই ছোট-বড় দুর্ঘটনাই তার জানান দেয়। দেশবাসীকে শোকের মাতম সইতে না সইতেই আবার দুর্ঘটনা হানা দেয়। কিন্তু নৌপথে নিরাপত্তার এ রকম বেহাল দশা চলবে কতকাল! আর কত প্রাণ হারালে আমাদের জ্ঞান ফিরবে?

নৌপথে সংঘটিত প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি হয়। নিয়ম অনুযায়ী কিছু তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও জমা দেয়। তদন্ত উঠে আসে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা। অদক্ষ চালক, ত্রুটিযুক্ত ও লাইসেন্সবিহীন নৌযান, বন্দর তত্ত্বাবধায়ক এবং নৌযানমালিকের দায়িত্বহীনতা।

দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, এ জন্য অভিযোগের সঙ্গে তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু এরপর এসব তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ—কোনোটিই আলোর মুখ দেখে না। আসলে নৌপথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাকেগুলোকে দুর্ঘটনা বললে ভুল হবে। এগুলো একধরনের হত্যাকাণ্ড। হত্যার বিচারের মতোই এগুলোর বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু বিচারের নজির যখন চোখে পড়ে না, তখন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে রং বদলে ফেলা কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩
প্রথম আলো

সবার চোখের সামনে অবাধে চলছে অসংখ্য অনুমোদনহীন যান। চোখ থাকতেও যেন আমরা অন্ধ। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে চালকের অদক্ষতা ও ত্রুটিপূর্ণ যানের কারণে। তাই চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছতা জরুরি। সেই সঙ্গে সব অনুমোদনহীন যান অপসারণ করতে হবে। কিন্তু চোর নির্মূল করতে প্রয়োজন সৎ ও দক্ষ লোক। এ জন্য জনবলকে সৎ ও দক্ষ হতে হবে।

কখনো দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তখন করণীয় কী, তা যাত্রার শুরুতেই যাত্রীদের অবহিত করা উচিত। অনেক সময় প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকলেও দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়ার উপায় না জানার কারণে সব বিফলে যায়। জীবন রক্ষাকারী সব উপকরণ সংরক্ষিত আছে কি না, যাত্রার শুরুতেই তা দেখা উচিত।

অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের দোষও কোনো অংশে কম নয়। বিশেষ করে ঈদ-পূজার সময় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। এ সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা বেশি। তাই যাত্রীদের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

সবশেষে বলতে চাই, নৌপথের সব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর হোক। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে নৌপথকে নিরাপদ করতে হবে। অন্যথায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

লেখক: আনিসুর রহমান, শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়