ঝিনাইদহে এসএসসি-০৭ এবং এইচএসসি-০৯ ব্যাচের মিলনমেলা

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। রোদের রং যত উজ্জ্বল হয়, একটু একটু করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। এরই মধ্যে স্মৃতিরোমন্থনে মিলনমেলায় একঝাঁক চির তরুণ। তাঁদের সবার বয়স ত্রিশের ঘরে। কিন্তু স্মৃতির আয়নায় চোখে-মুখে তারুণ্যের প্রকাশ যেন সেই ঝলমলে একুশ। কেউ বন্ধুর গলা জড়িয়ে হাঁটছেন, কেউ বন্ধুকে পাশে নিয়ে সেলফি তুলছেন, চিরচেনা গানের সুরে নেচে-গেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনেকেই।

এমনই বৈচিত্র্যময় এক উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিল ঝিনাইদহের জোহান ড্রিমভ্যালি পার্কের মাঠ। গত শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সারা দিন এসএসসি-২০০৭ এবং এইচএসসি-২০০৯ ব্যাচের ঝিনাইদহ জোনের আয়োজনে আনন্দে-উৎসবে মেতে ছিলেন তিন শতাধিক বন্ধু। ঝিনাইদহের বাইরে কুষ্টিয়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেকে এসেছেন শুধু এই মিলনমেলায় অংশ নিতে, সবার সঙ্গে দেখা করার জন্য। ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে এটি একটি অনেক বড় ইতিবাচক দিক বলে সবাই মনে করছেন।

উৎসবের নাম ‘মিলনমেলা’। সেই মিলনমেলা ঘিরে বন্ধুকে কাছে পাওয়ার অভূতপূর্ব মুহূর্তগুলোর উচ্ছলতা চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। সকাল ১০টার আগেই পার্কের আয়োজনস্থল এসএসসি-২০০৭ এবং এইচএসসি-২০০৯ ব্যাচের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে। ‘বন্ধু, কেমন আছিস, কী খবর বল?’ কুশল বিনিময় আর হৃদয়ের উষ্ণতায় প্রাণের টানে স্কুল-কলেজের সেই দিনগুলোয় ফিরে আসা। স্থানে স্থানে গল্প-আড্ডা, ছোট দলেও এখানে-সেখানে বসে গেছেন। এর মধ্যে চলে সকালের নাশতাপর্ব।  

মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারী যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী টিপু আহমেদ বলেন, ‘ভালোবাসার টানে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করব বলে চলে এসেছি। তাই নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমি সবাইকে আবার বলব, বন্ধু শক্তি, বন্ধু প্রেরণা।’

আরেক বন্ধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘মিলনমেলার মাধ্যমে কিছু বন্ধুবৎসল পাগলা একত্র হলাম। ঐতিহাসিক এ সম্মিলনে বারবার মনে উদয় হলো আমরা ক্লাসে আছি। মন চায় আবার সেই দশম শ্রেণিতে ফিরে যেতে। শিক্ষকদের শাসন, পড়া না পারলে বেতের বাড়ি, দুষ্টুমি, স্কুল পালানো, টিফিনের পর পালানো, সহপাঠীর সঙ্গে খুনসুটি ইত্যাদি খুব মিস করি।’

কালীগঞ্জ থেকে আসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হওয়ায় এক মিলনমেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই বন্ধুত্ব যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বজায় থাকবে, আমার বিশ্বাস। সারা জীবন যেন বন্ধুদের পাশে থাকতে পারি।’

এই গ্রুপ হাসি-আনন্দের পাশাপাশি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সবার জন্য কাজ করবে, যেখানে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা এবং গঠনমূলক ও সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি মাইলফলক তৈরি করবে বলে গ্রুপের উদ্যোক্তাসহ অ্যাডমিনরা স্বপ্ন দেখছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মিলনমেলার পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও ঝিনাইদহ জোনের গ্রুপ অ্যাডমিনরা জানিয়েছেন।

দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেলে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ব্যাচের বন্ধুদের হাস্যরসে ভরা উপস্থাপনা মাতিয়ে রাখে শতাধিক শ্রোতাকে। পরে নাচে-গানে মঞ্চ মাতান জেলার শিল্পীরা। শেষে আবার দেখার প্রতিশ্রুতিতে ভাঙে মিলনমেলা।