আমার নিরাপদ স্থান আমার মা

প্রতীকী ছবি

‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দ শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মায়ের অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের গর্ভধারিণী, জননী। জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সবার জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে। তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। আমাদের মায়েরা সন্তানের মুখে শুধু ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান।

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা, তিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, যা–ই হোন না কেন, সন্তানের কাছে তিনি কিন্তু মা। ইসলামে ‘মায়ের পায়ের নিচে বেহেশত’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। উপনিষদে পড়েছিলাম, ‘মাতৃ দেব ভব’। অর্থাৎ মা দেবী স্বরূপিণী, জীবন্ত ঈশ্বরী। খ্রিষ্টধর্মেও রয়েছে ‘মাদার মেরি’র বিশেষ তাৎপর্য।

আমার ‘মা’ একজন শিক্ষক। সকালে ঘুম ভাঙে আম্মুর ফোন কলের মাধ্যমে। আর সে জন্যই হয়তো প্রতিদিনই তাঁর কথা মনে হয় বেশি করে। প্রতিদিনই আমি বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় আম্মু বলে, ‘সাবধানে যাস, বাবা।’ আবার বাসায় ফিরে তার মুখখানাই প্রথমে দেখি। জন্মের পর থেকে আমি নাকি খুব ডানপিটে ছিলাম, আম্মু আমাকে এ জন্য খুব পিটুনি দিত। এখন মনে হয়, ওই পিটুনিগুলোর জন্যই হয়তো এই জায়গায় এসেছি। রাতে দেরি করে ফিরলে মা আমার জন্য বসে থাকত। এখনো থাকে, যখন বাসায় থাকি। আব্বুর কাছে আমার সব আবদার আম্মুর মাধ্যমেই আমি হাসিল করে থাকি। আব্বুর আমাকে নিয়ে সব আভিযোগ আম্মুই সামলে নেয়। স্কুলজীবন শেষ করার পর বাসার সবার সঙ্গে মতের অমিল থাকা সত্ত্বেও আম্মু আমাকে সৈয়দপুর পাঠাল। বাসা থেকে যাওয়ার সময় দেখি, আম্মু দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। আগের বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বাসা থেকে যাওয়ার সময় আম্মু আমাকে বাসে তুলে দিতে যাবে, আমি বললাম, ‘থাক আম্মু, তুমি বাসায় থাকো। আমি একাই যেতে পারব।’

আম্মুর চোখ দিয়ে যেন টপটপ করে জল পড়ছিল আর বলছিল, ‘সাবধানে থাকিস, বাবা।’ আমার একটা অভ্যাস আছে, বাসায় এলে পুরো বাড়ি তছনছ করি। আম্মু আমাকে বলে, ‘পারলে কলিজাটাও মনে হয় তুই ঘাঁটিস।’ মায়ের কাছে যেন আমি এখনো ছোট তনুই।

এখন আমরা সবাই ব্যস্ত। বছরে অল্প কয়েক দিন বাসায় থাকি। ব্যস্ত জীবনের প্রতিমুহূর্তে মায়ের মুখখানা ভেসে আসে চোখের সামনে। ফিরে যেতে ইচ্ছা করে মায়ের কোলে। মনে হয়, মায়ের কোলই যেন সবচেয়ে নিরাপদ। বলতে ইচ্ছা করে, ‘অনেক ভালোবাসি মা তোমায়।’

লেখক: তাজওয়ার আহমেদ তনয়, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।