আপনিও হয়ে যেতে পারেন এক দিনের মাঝি

একটু ভাবুন তো, যদি আপনি মাঝি হোন আর আপনার প্রিয়জন আপনার সহযাত্রী; তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে? মনে মনে ভাবছেন, এটা আবার কীভাবে সম্ভব? এসব শুধু কল্পনাতেই হতে পারে, বাস্তবে নয়। আবার অনেকে বলতে পারেন, উনি কী বলছেন?

শিরোনাম দেখে এমন নানা প্রশ্ন আপনার মনে জাগতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। মনে অনেক প্রশ্ন জাগলেও এমনটাই বাস্তবে সম্ভব জনপ্রিয় রাইড প্রতিষ্ঠান ‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট’–এ। এখানে টিকিট সংগ্রহ করলেই আপনাকে বিশাল এক লেকের ভেতর বোটে বসিয়ে হাতে বইঠা ধরিয়ে দেওয়া হবে। ফাইবারের তৈরি হালকা বোট এবং স্টিল ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি বইঠা দেখে আপনি উৎফুল্ল হয়ে উঠবেন।

লেকের মধ্যে ঢুকলে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনি অজান্তেই হারিয়ে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। যতই লেকের ভেতরে যাবেন, ততই আপনি মুগ্ধ হবেন। সবুজে ঘেরা গাছগাছালি ও পাখির কলকাকলি আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি দেবে।

ভাগ্যে থাকলে কায়াকিং করতে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা মিলবে বাদিহাঁস, রাজহাঁসসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। বড় বড় মাছের দেখাও মিলতে পারে। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই লেকের স্বচ্ছ জলরাশি যে কাউকে আকৃষ্ট করবে মুহূর্তে।

এখানে ৩০ মিনিট ৪০ টাকা অথবা ১ ঘণ্টা ১৫০ টাকায় টিকিট সংগ্রহ করে কায়াকিং করতে পারবেন। অন্যদিকে পানিতে ভাসমান ব্লকের ওপর তৈরি লাভ পয়েন্টে ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে ছবি তুলতে পারবেন এবং সেখানে সময় কাটাতে পারবেন।

এ ছাড়া গাড়ির আদলে তৈরি প্যাডেল বোটে আপনি ঘুরতে পারবেন। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে ডরিমন রাইড। ২০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে রাইডে উঠলে দুলতে থাকবে রাইডটি। মিউজিকের তালে তালে শিশুরা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

পর্যটকদের আকর্ষণীয় এই ‘ভোলা কায়াকিং পয়েন্ট’টি ভোলা পৌর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে ভেলুমিয়া বাজারের পাশে বান্দেরপাড় নামক স্থানে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে ঘুরতে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। স্বল্প সময়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এ পর্যটনকেন্দ্রটি।
বরিশাল থেকে ঘুরতে আসা সিয়াম, রাশেদ, মিরাজসহ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হলো। তাঁরা জানালেন, ‘বরিশাল বিভাগের মধ্যে এমন সুন্দর জায়গা আমার চোখে পড়েনি। সুযোগ হলে আবার ঘুরতে আসব।’

বাংলাদেশে কায়াকিংয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা শেখ সাইদুল ইসলাম ও সাইফুদ্দিন শামীমের সহযোগিতায় ভোলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. এমদাদ হোসেন, এম শরীফ আহমেদ ও সুমন মুহাম্মদ মিলে এ প্রজেক্টটি শুরু করেন। বরিশাল বিভাগে তাঁরাই প্রথম ভোলায় কায়াকিং পয়েন্ট চালু করেন।

‘কায়াক’ শব্দটি এ দেশে অতটা প্রচলিত নয়। ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি সরু নৌকাকে কায়াক বোট বলা হয়। চালাতে হয় বইঠা দিয়ে। কানাডায় প্রথম শুরু হয় কায়াক চালনা। বিদেশে সমুদ্র ও নদীতে কায়াক চালনার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে এ দেশে বিনোদনের জন্যই কায়াকিং চালু হয়েছে।
লেখক: এম শরীফ আহমেদ