দক্ষিণ এশিয়ায় মানবসম্পদ উন্নয়ন: বাংলাদেশ পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা কে কোথায়

ফাইল ছবি

ভৌগোলিকভাবে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে দক্ষিণ এশিয়া বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ রয়েছে মোট আটটি। প্রতিটি দেশের মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক কাঠামো বেশ ভালো। এর মধ্যে ভৌগোলিকভাবে এ অঞ্চলের প্রতিটি খাতে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু নীতিমালা রয়েছে। যে নীতিমালা অনুসরণ করে দেশটির কার্যক্রম গঠিত হয় দেশে ও বহির্বিশ্বে। অর্থনৈতিক অবস্থান, প্রযুক্তিগত কর্ম, বৃহৎ অবকাঠামো, শক্তিশালী সামরিক অবস্থানের জন্য ভারত পুরো বিশ্বের কাছে সমীহ জাগানিয়া দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশসহ নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, আফগানিস্তান বাকি দেশগুলোর কর্মকাণ্ড নিজস্ব ঢঙে চললে ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়ে শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে। অপর দিকে পাকিস্তানে সম্প্রতি ইমরান খান সরকারের পরিবর্তনের ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে সুখকর নয়।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশীল একটি দেশ। এর প্রমাণ হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান। আর বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ হচ্ছে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ প্রতিটি খাতে দেশে ও বহির্বিশ্বে দেশটির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন লক্ষণীয়। পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—এসব দেশের উন্নতির গ্রাফে বিশেষ সংযোজন।

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার শোচনীয় অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাংলাদেশসহ বাকি দেশগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। দেশটিতে দক্ষ মানবসম্পদ থাকলেও লঙ্কানরা অবকাঠামো উন্নয়নকে মূল প্রাধান্য দিতে গিয়ে দক্ষ মানবসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি, যার মাশুল দিতে হচ্ছে দেশটিকে। অবকাঠামো নির্মাণ কোনো দেশের মূল উন্নয়ন হতে পারে না। বরং অবকাঠামো খাত দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার একটি অংশ হতে পারে।

দক্ষ মানবসম্পদ গঠন করা হলে এবং তাদের দেশের প্রতিটি খাত অনুযায়ী কাজে লাগানো হলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আর্থসামাজিক জীবনযাত্রার মান বিশ্বমানের হবে। এ ছাড়া যেকোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে শক্ত হাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে দক্ষ মানবসম্পদ।

জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান। অন্যদিকে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। সর্বত্র নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিটি দেশে চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ সরবরাহ করা হলে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান হবে। মানবাধিকার চাহিদা পূরণ হবে। এ অঞ্চলের চিহ্নিত সমস্যার প্রতিকার হবে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্ট হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে প্রতিটি দেশের। অর্থাৎ সুদক্ষ মানবসম্পদ নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার পট পরিবর্তনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে বিশ্বব্যাপী।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানবসম্পদ নির্মাণের হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে এ অঞ্চল পুরোপুরি দৃষ্টি কাড়তে পারেনি সবার কাছে। কারণ, বিভিন্ন অপ্রতুলতা রয়েছে এ অঞ্চলে, যেমন অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডিজিটাল শিক্ষার বিস্তার বৃদ্ধি না পাওয়া, কারিগরি শিক্ষার অভাব, দেশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা, বাড়তি ঋণ নেওয়া, সীমান্তজনিত সমস্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া পশ্চিমা অঞ্চলের তুলনায় গবেষণা কম হওয়াও অন্যতম বড় একটি কারণ মানবসম্পদ নির্মাণে।

  • লেখক: শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়