জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো নেই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

করোনা পরিস্থিতি কবে শেষ হবে, কবে পরিবেশ স্বাভাবিক হবে, তা কেউ বলতে পারছে না। পরিবেশ স্বাভাবিক না থাকায় আমাদের মতো নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছে, তারা পড়েছে মহাবিপাকে। কবে করোনা পরিবেশ স্বাভাবিক হবে আর কবেইবা পুরোদমে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে, তা কি কেউ বলতে পারে?

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা কিছু গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীও আছে, যারা অভাব-অনটনে প্রতিকূলতা কাটিয়ে নামীদামি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেনি; কিন্তু তারা ঠিকই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছে।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারব, কতটা ভালো আছে এই জাতীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আমাদের দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল। সব শিক্ষার্থীর সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত, অর্থাৎ ২৯ মে পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউনের। কিন্তু বর্তমান সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পড়াশোনার গতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পারছে না অনলাইন ক্লাস করতে, পারছে না পরীক্ষা সম্পন্ন করতে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর আটকে গেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তারা পারছে না গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে। শত কষ্ট আর হতাশায় ডুবে আছে। যখন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র খুলে দেওয়া হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম মেনে সব কাজকর্ম চলছে, তখন কি এই শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করা যায় না? সব মিলিয়েই ঝামেলায় রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা আশঙ্কা করছে সেশনজটে আটকে পড়ার।

অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা পড়াশোনায় ভালো হয়েও মাঝেমধ্যে দু-একটা বিষয়ে আটকে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পর ক্লাস বা পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তারা পারছে না তৃতীয় বর্ষের পড়াশোনা শুরু করতে, পারছে না পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে। আবার অন্য কোনো বিষয়ে যদি আশানুরূপ ফলাফল না হয়, তাহলে স্বল্প সময়ে তারা কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লাগাতার পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব মিলিয়েই চিন্তিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব শিক্ষার্থীর মনে আশঙ্কা সেশনজটে আটকে পড়ার। অনার্স পাস করে গ্র্যাজুয়েট হয়ে যখন পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা, তখন একজন অনার্সপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক মেধাবীর স্বপ্ন।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা হলেও সেশনজটে না পড়ার স্বস্তি আসবে। এ জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন, শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিন। আমাদের নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা চিন্তা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিন।

*লেখক: আবদুল্লাহ আল মারুফ, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ