দুই বাংলার লেখকদের লেখা নিয়ে ‘শত কথার শত গল্প’র তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত

বাংলা ভাষার প্রথম ১০০ শব্দের গল্পসংকলন ‘শত কথার শত গল্প’ এর তৃতীয় খণ্ডের প্রচ্ছদ

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠক মুক্ত আসর উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলায় বাংলা ভাষার প্রথম ১০০ শব্দের গল্পসংকলন ‘শত কথার শত গল্প’ এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হলো। দুই বাংলার ১০০ জন প্রতিষ্ঠিত ও তরুণ লেখকদের লেখা নিয়ে ‘শত কথার শত গল্প’এর তৃতীয় খণ্ড। বইটি সম্পাদনা করেছেন কবি, সংগঠক ও সম্পাদক আবু সাঈদ। প্রকাশ করে স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন। বইটি উৎসর্গ করা হয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দুই দিকপাল তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ও সৈয়দ মুজতবা আলী। প্রচ্ছদ করেন শিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি।

শত কথার শত গল্প ( তৃতীয় খণ্ড) বইয়ের সম্পর্কে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি পুরস্কারের জন্য আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ছয় শব্দের একটি ছোট গল্প লিখছিলেন। গল্পটা ছিল এ রকম—বিক্রয় হবে শিশুর জুতা কখনো পরেনি। কতখানি ট্র্যাজেডি লুকিয়ে আছে ছয়টা শব্দে। কী সুন্দর গল্প! এই ছয় শব্দে যদি গল্প হয় তাহলে ১০০ শব্দে কেন হবে না? আমি মনে করি ১০০ শব্দে অনেক বিষয় বৈচিত্র্য দেওয়া যায়। কারণ ছোটগল্প একটু চমক দিয়ে শেষ হয়। একটু ভাবনা রেখে যায়। চিন্তার অবকাশ তৈরি করে দেয়। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন যে গল্প আসলে শেষ হয়েও শেষ হয় না। অশেষ একটা ভাব যখন গল্পে থাকে তখন সেটা একশ, এক হাজার, দুই হাজার এমন কোনো শব্দের ফ্রেমে একে বাধা যায় না। এটা প্রকাশ কুশলতার বিষয়। আমি মনে করি আমাদের তরুণেরা অনেক বেশি প্রকাশ কুশলী। তারা এই সময়ের মানুষ। তারা এই ভাষাটা জানে। এ বিষয়ে তারা একটি বিশিষ্টতা ও অধিকার তৈরি করেছে। ১০০ শব্দের গল্প প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড গল্প পড়েছি। এর অনেকগুলো গল্প আমার মনে দাগ কেটেছে। এই গল্পের একটা পাঠক শ্রেণী আছে। যখন কোনো গল্পের পাঠক শ্রেণী থাকে তখন সেটা আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে যায়। আমি মনে করি এটা একটা শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। যারা এর সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই। তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। এটিকে যেন কেউ চমক না ভাবেন। এটি চমকের বিষয় না এটি হলো গল্প শেখার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন। এর মাধ্যমে শেষ বিচারে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে।’

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি সভাপতিমণ্ডির সদস্য, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড.এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘খুবই আনন্দের কথা জীবন্ত সংগঠন ‘মুক্ত আসর’ তৃতীয়বারের মত ১০০ শব্দের গল্প সংকলনের চমক নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। এই সংগঠনের একদল প্রতিভা ছড়ানো তরুণ—যাদের জীবনের চেয়েও স্বপ্ন অনেক বড়, ওরা নানা সৃজনশীল কাজে নিজেদের যুক্ত রাখছে। সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজনের পাশাপাশি লেখক সৃষ্টি ও প্রকাশনার দায়িত্বও নিয়েছে। দুই বাংলার ১০০ শব্দে ১০০টি অণুগল্প এক সঙ্গে করা সোজা কথা নয়। ‘মুক্ত আসর’ অমন অসাধ্য সাধন করেছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটো গল্পগ্রন্থের সফল প্রকাশনার মাধ্যমে। এবারের তৃতীয় গল্পগ্রন্থটিও একইভাবে পাঠকপ্রিয়তা পাবে বলে আশা রাখি। গল্পের শত লেখক ও সম্পাদনা সংশিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই।’

বইটির সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, সবার উৎসাহ–উদ্দীপনায় শত কথার শত গল্প এর তৃতীয় খণ্ডটি প্রকাশ করতে পেরেছি। সত্যি, অবাক লাগে যখন এমন একটি ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করি— ভাবতে পারিনি এত দূর পর্যন্ত যেতে পারব। সবাইকে কৃতজ্ঞতা। তিনি আরও বলেন, আমরা মুক্ত আসর এর উদ্যোগে ২০১৮ সাল থেকে বাংলা ভাষায় প্রথম ১০০ শব্দের ১০০টি গল্প নিয়ে শত কথার শত গল্প সংকলনটি প্রকাশ করে চলছি। চারপাশে অনেকেই এখন এই ধারণাটি নিয়ে কাজ করছেন, এটাই আমাদের বড় সার্থকতা, ভালো লাগার বিষয়। দুই বাংলায় ১০০ শব্দের গল্প প্রতিযোগিতার প্রতিযোগীদের নির্বাচিত লেখা ও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখা নিয়ে প্রতিবারের মতো তৃতীয় খণ্ডটি নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে। প্রকাশনা পৃষ্ঠপোষকতায় দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড বরাবরের মতো এই উদ্যোগকে ঋদ্ধ করেছে।তাঁদেরকে ধন্যবাদ।’

শত কথার শত গল্প তৃতীয় খণ্ডে যাঁরা লিখেছেন— বাংলাদেশের সেলিনা হোসেন,হরিশংকর জলদাস, সেলিম জাহান,আনিসুল হক, আখতার হুসেন, শামীম আজাদ, দন্ত্যস রওশন, শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, নুরুন আখতার, মাসরুর আরেফিন, কাজী আলিম–উজ–জামান, পল্লব মোহাইমেন, সুমন্ত আসলাম, সারফুদ্দিন আহমেদ, অঞ্জন আচার্য, আবেদা সুলতানা, আবু সাঈদ,মাসউদ আহমাদ,অনীক রাহীম, অনিন্দিতা চৌধুরী, অতসী আমিন, অমিত কুমার বসুনীয়া, অনন্য যারিফ আকন্দ, আদিব একরাম,আসাদুজ্জামান অংশুমান,আরেফিন রেজোয়ান, আবদুল্লাহ আল রাফি সরোজ আশফাকুজ্জামান, আর. এস. লীনা, আব্দুল আজিজ,ইফরাত জাহান, ইব্রাহীম রাসেল, কোরবান আলী, কাজী সাবরিনা তাবাস্‌সুম, কৌশিক চাকমা, খায়রুল বাবুই, খায়রুল আনাম,চৈতি রায়, জাকিয়া সুলতানা, জিনাত নাজিয়া, জুবায়ের শাওন, জাহরান আলম বন্ধন, জেমস আনজুস, জামাল উদ্দিন, ডানা মির্জা, তপতী বর্মন, তাসনুভা অরিন, তানভীর আহমেদ, তাবাসসুম তমা, নুসরৎ নওরিন, নাজিয়া দীপ্তি, নর্মদা মিথুন, নওরীন নাহার, নিগার সুলতানা বিলতু, নৃ মাসুদ রানা, পূর্ণা চাকমা,ফরিদা ইয়াসমিন সুমি,ফারাহ দিবা আহমেদ,ফরিদা বেগম, ফারহা ফাওজিয়া অতসী, ফারজানা ববি,ফাহিমা আক্তার, ফাতিহা ইফতি, মাসুম বিল্লাহ, মাহেরা বিনতে রফিক,মাহফুজ রিপন, মাহবুব নাহিদ, মনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ শাহেদ হাসান, মীর মাইনুল ইসলাম,শ্যামল সরকার, শায়লা রহমান,শান্তা তাওহিদা,শিমুল শাহিন, সাহিনা মিতা,সাজেদুল আলম, সোহেল নওরোজ, সাদিয়া জাফরিন, সাজিয়া আফরিন সুলতানা, সাব্বির হোসেন (নাফিজ), সাহাদাত পারভেজ, সোলায়মান সুমন, রাশেদা নাসরীন, রফিকুল ইসলাম ফারুকী, রাহিম মিয়া, রিজভী আহমেদ, রয়েল পাল, হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, হাবীব ইমন, হুমায়রা ফাইরুজ খান ও হাবিবুল্লাহ ফাহাদ। ভারতের মিলনকান্তি বিশ্বাস, সঞ্জিত দত্ত, কাজল সেন, তরুণ চক্রবর্তী, তৈমুর খান, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, পলাশ পাত্র, সঞ্জয় দত্ত ও স্বদেশ রায়।