পণ্যের দাম দেখার কি কেউ নেই

ছবি: প্রথম আলো

বাজারে গেলাম সবজি কিনতে। শীতকাল প্রায় এসে গেছে। হয়তো নতুন সবজি পাব সেই আশায়। সারা বাজার ঘুরে একটা দোকানে শিম পাই। আশায় বুকটা ভরে ওঠে। শীতকালীন একটা নতুন সবজি পাওয়া গেল। দোকানিকে জিজ্ঞাস করি দাম কত? দোকানি উত্তরে বলেন, ‘একদাম ২০০ টাকা কেজি।’ অবাক হয়ে যাই। শিম শীতকালীন সবজি হয়েও এত দাম!

বেগুন কত জিজ্ঞাস করি, প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা। আলুর দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা। সবকিছুর দামই বেশি। পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম সাধ্যের ঊর্ধ্বে।

করোনায় পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। অনেক মানুষ হারিয়েছে কাজ। আয়রোজগার নেই। শাকসবজি, খাদ্যসামগ্রী, চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজ, তেল-মসলা—সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য অগ্নিমূল্য। মানুষ এখন দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা, বেগুন ৮০, করলা ৭০, পেঁয়াজ ৮০, কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা; ডাল, তেল, মসলার দাম গগনচুম্বী। তাঁরা ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ, ২৫০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ ও ২০০ টাকা কেজি শিম কীভাবে কিনে খাবেন?

সবজির দাম যদি হয় এমন, তাহলে দেশের মানুষ খাবে কী? শীতকালে সবজির ফলন হয় বেশি। দাম কম থাকার কথা। চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি। দাম কমবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশের মানুষ সারা বছর তেমন সবজি না পেলেও শীতকালে সবজির ঘাটতি থাকে না।

সারা দেশের সব জায়গায় শীতকালে সবজির ফলন হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে মোটাদাগের বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা হয় প্রতিবছর। এ বছর রপ্তানি করা যাচ্ছে না করোনার জন্য। কিন্তু তবু দেশে সবজির দাম এত!

তাহলে বলা যায়, ‘এতে বাজারে সিন্ডিকেটিং চলছে, মধ্যস্থতাকারীদের গাফিলতি চলছে!’ যদি তা–ই হয়, তাহলে দেশের সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? সরকার কেন নির্বিকার? কিছুদিন আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে বাজার সিন্ডিকেটিং জড়িয়ে ছিল। দেশে পেঁয়াজ আছে, কিন্তু তারা সেগুলো আড়তে আটকে রেখেছে। চালের দাম বাড়ার পেছনেও মধ্যস্বত্বভোগীরা জড়িত ছিল। এভাবে যদি সবজির বাজারব্যবস্থায় সিন্ডিকেটিং চলে, তাহলে দেশের সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ, করোনার জন্য দেশের মানুষের আয় কমে গেছে। ৫০ টাকা কেজি আলু, ২৫০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ আর ২০০ টাকা কেজি শিম কিনে খাওয়ার সাধ্য এখন সাধারণ মানুষের নেই।

সাধারণ মানুষ এখন সবজির বাজারে গিয়ে বলে, ‘বাজারে এখন আগুন লেগেছে।’ দেশের সাধারণ মানুষ যেন বাজার থেকে সাধ্যমতো কম দামে সবজি, খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা দেশের সরকারের নেওয়া উচিত। বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ী এবং সবজি ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এগুলো কি দেখার কেউ নেই।

*শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়