কুয়াশাভেজা ভোরে, জড়িয়ে রাখে মায়াবী আবেশে

ষড়্‌ঋতুর বাংলাদেশে পৌষে শীত আসে, মাঘে সেই শীত আরও তীব্র হয়ে আসে
ছবি: লেখক

বাংলাদেশ ষড়্‌ঋতুর দেশ। আর পৌষে শীত আসে, মাঘে সেই শীত আরও তীব্র হয়ে পড়ে। ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু কুয়াশাভেজা ভোরে, জড়িয়ে রাখে সারাক্ষণ এক মায়াবী আবেশে। আজ কয়েক দিন সেই শীতের আবেশ। সন্ধ্যার সঙ্গে শীতের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, সেই শীতের আবহ কমে বেলা ১১টায়, যখন আকাশে রোদের হাসি মেলে। জানালার ছোট্ট বিন্দু ছিদ্র দিয়ে কুয়াশার ছোঁয়া কিংবা পথে ও ঘাসে শিশিরের মেলা দেখে কে না আনন্দ পায়? শীতকালে মাঝেমধ্যে সুয্যিমামা তো দেখাই দেয় না। কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে যেন পুরো গ্রাম-শহর-মানুষ আর মানুষের মন! ‘এক মাঘে শীত যায় না’—বাঙালির এই প্রবাদের খবর অনেকেরই জানা। এখানে শীত বিপদের অনুষঙ্গ। আবার বিপরীত ভাবের প্রবচনও আছে—‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’।

আর এই সময় পিঠা–পায়েসের মহা উৎসব চলে গ্রামে গ্রামে। ভাপা, পুলি, খেজুরের রস, পাটালি গুড়, কোঁচাভর্তি মুড়ি-মুড়কি, পিঠা-পায়েস, খড়পাতার আগুন তাপানো, গমের খেতে পাখি তাড়ানো, লেপ-কম্বলের উত্তাপ, কুয়াশাঢাকা ভোরে ও সন্ধ্যায় আনন্দ-কষ্টের মিশেল নিয়ে আমাদের জীবনে শীতকাল হাজির হয়। শীতের মিঠে রোদ, কুয়াশার চাদর, উঠোনের কোণে মাটির চুলায় রান্না, চুলার পাশে বসে বসে হাতের তালু গরম করে নেওয়া, পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উদাম শরীর—শরীরের শিরশির কাঁপুনি, চায়ের কাপের সাদাটে ধোঁয়া, হলুদ শর্ষের মাঠ—এসব ছবি আর ছবির পেছনের গল্প আমাদের কাছে খুব বেশি চেনা। মিষ্টি লাগে রোদ পোহাতে সকালের রোদে, উঠোনজুড়ে সেই ক্ষণে মজার আড্ডা জমে। প্রকৃতি সাজে এই সময়ে নানা রঙের ফুলে, মৌমাছি ব্যস্ত থাকে মধু সংগ্রহ করতে। আর ফসলের মাঠে নানা প্রকারের ডালের আবাদ। এ ছাড়া শর্ষে, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, গম, ভুট্টা, তিল ইত্যাদি শস্য কৃষকের ঘরে ওঠে।

শীতে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু কুয়াশাভেজা ভোরে, জড়িয়ে রাখে সারাক্ষণ এক মায়াবী আবেশে
ছবি: লেখক

পরি আসে হলুদ শাড়ি পরে এই শীতকালে,
শিশির কণায় পা ভেজায় ভোরের শর্ষেখেতে।
ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি আসে ঋতু বৈচিত্র্যের দেশে,
পাড়ি জমায় এই শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে। এ যেন এক অন্য সাজে প্রকৃতির আবির্ভাব।

  • লেখক: মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়