আর কত নির্বাক থাকবে সমাজ

ধর্ষণ, ধর্ষণের শিকার—এই শব্দগুলো লিখতে গেলে কলম থমকে যায়। পাহাড় থেকে সমতলে একের পর এক নারী নির্যাতিত হয়েছে। আর দেশ তা দেখছে ভাষাহীন হয়ে। ঘটনার পর মামলা, আন্দোলন, সমালোচনার ঝড়—সবই অতীতের আর সব ঘটনার মতো হচ্ছে। এমনকি নারী প্রতি বীভৎস অত্যাচারকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তর্ক–বিতর্কের অন্ত নেই। কিন্তু একজন ধর্ষণকারীর একমাত্র পরিচয় সে জঘন্যতম অপরাধের অপরাধী। তার দায় আর কারও হতে পারে না। পিতামাতা কোনো ধর্ষকের  জন্ম দেয় না। সন্তান যখন খারাপ হয়, তার দহন মা–বাবা বুঝতে পারেন কেবল।

পরিতাপের বিষয় হলো, দেশের আইনে ধর্ষণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থাকা সত্ত্বেও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, তার উত্তর বা সমাধান পাওয়া খুব মুশকিল। ধর্ষণ শব্দটি এ সমাজের ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। কারণ  মানুষের নৈতিক অবক্ষয়কে আইন দিয়ে কেবল সংশোধন করা যায় না। এর জন্য নিজের ভেতরের বোধশক্তিটা জাগ্রত করতে হয়। তা না হলে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার শঙ্কায় ভুগবেন। আর সমাজ নির্বাক হয়ে দেখবে কেবল।

নারীর জীবনের নিশ্চয়তার জন্য আইন যত শক্তিশালী হোক, ব্যক্তি ও সমাজের পরিবর্তনটা দরকার সবার আগে। আর এ পরিবর্তনের জন্য সচেতনতটা খুব জরুরি। সচেতনতা নেই বলে সাজা কঠিন জেনেও প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ভালো–মন্দ বোঝার বিবেকবোধ যার থাকে, সে পারে না ব্যভিচার করতে।

ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সাময়িকভাবে সোচ্চার হয়ে থেমে গেলে চলবে না। ধর্ষণের প্রতিরোধ করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের মুখ্য দায়িত্ব সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। কেবল আইন দিয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তাই সমাজের সবাইকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে নৈতিকভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে। তবেই দেশ থেকে ধর্ষণ শব্দটি মুছে দিয়ে নারীকে নিরাপদ জীবন দিতে পারবে সমাজ।

*লেখক: হাসিনা আকতার নিগার